পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

838 রবীন্দ্র-রচনাবলী এই কারণেই রায়তের কথাটা মুলতবিই থেকে যায়। আগে পাতা হোক সিংহাসন, গড়া হোক মুকুট, খাড়া হোক রাজদণ্ড, ম্যাঞ্চেস্টার পরুক কোপ্‌নি— তার পর সময় পাওয়া যাবে রায়তের কথা পাড়বার। অর্থাৎ, দেশের পলিটিক্স আগে, দেশের মানুষ পরে। তাই শুরুতেই পলিটিকসের সাজ-ফর্মাশের ধুম পড়ে গেছে। সুবিধা এই যে, মাপ নেবার জন্তে কোনো সজীব মানুষের দরকার নেই। অন্ত দেশের মানুষ নিজের দেহের বহর ও আবহাওয়ার প্রতি দৃষ্টি রেখে বার বার কেটে-ছেটে বদলে জুড়ে যে সাজ বানিয়েছে ঠিক সেই নমুনাট দর্জির দোকানে চালান করলেই হবে। সাজের নামও জানি– একেবারে কেতাবের পাতা থেকে সন্ত-মুখস্থ–কেননা, আমাদের কারখানা-ঘরে নাম আগে, রূপ পরে। ডিমোক্রেসি, পার্লেমেণ্ট, কানাডা অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ-আফ্রিকার রাষ্ট্রতন্ত্র ইত্যাদি, এর সমস্তই চোখ বুজে কল্পনা করতে পারি ; কেননা গায়ের মাপ নেবার জন্তে মানুষকে সামনে রাখবার বালাই একেবারেই নেই। এই স্থবিধাটুকু নিষ্কণ্টকে ভোগ করবার জন্তেই বলে থাকি, আগে স্বরাজ, তার পরে স্বরাজ যাদের জন্তে তারা । পৃথিবীতে অন্য সব জায়গাতেই দেশের মানুষ নিজের প্রকৃতি শক্তি ও প্রয়োজনের স্বাভাবিক প্রবর্তনায় আপনিই আপনার স্বরাজ গড়ে তুলেছে ; জগতে আমরাই কেবল পঞ্জিকার কোনো-একটি আসন্ন পয়লা জানুয়ারিতে আগে স্বরাজ পাব, তার পরে স্বরাজ্যের লোক ডেকে যেমন করে হোক সেটাকে তাদের গায়ে চাপিয়ে দেব। ইতিমধ্যে ম্যালেরিয়া আছে, মারী আছে, দুর্ভিক্ষ আছে, মহাজন আছে, জমিদার আছে, পুলিসের পেয়াদা আছে, গলায়-ফাস-লাগানো মেয়ের বিয়ে, মায়ের শ্রাদ্ধ, সহস্ৰবাহু সমাজের ট্যাকসো, আর আছে ওকালতির দংষ্ট্রাকরাল সর্বস্বলোলুপ আদালত। এই-সব কারণে আমাদের পলিটিকসে তোমার ‘রায়তের কথা’ স্থানকালপাত্রোচিত হয়েছে কি না সন্দেহ করি । তুমি ঘোড়ার সামনের দিকে গাড়ি জোংবার আয়োজনে যোগ দিচ্ছ না ; শুধু তাই নয়, ঘোড়াটাকে জোৎবার উদযোগ বন্ধ রেখে খবর নিতে চাও সে দানা পেলে কি না, ওর দম কতটুকু বাকি। তোমার মন্ত্রণাদাতা বন্ধুদের মধ্যে এমন-কি কেউ নেই যে তোমাকে বলতে পারে— আগে গাড়ি টানাও, তা হলেই অমুক শুভ লগ্নে গম্যস্থানে পৌছবই ; তার পরে পৌছবা মাত্রই যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে খবর নেবার জন্তে যে, ঘোড়াটা সচল না আচল, বেঁচে আছে না মরেছে । তোমার জানা উচিত ছিল, হাল আমলের পলিটিক্সে টাইমটেব্‌ল তৈরি, তোরঙ্গ গুছিয়ে গাড়িতে চড়ে বসাই প্রধান কর্তব্য। অবশেষে গাড়িটা কোনো জায়গাতেই পৌছয় না বটে, কিন্তু সেটা টাইমটেব্‌লের দোষ নয় ; ঘোড়াটা চললেই হিসেব ঠিক মিলে যেত। তুমি তার্কিক ; এতবড়ো উৎসাহে বাধা দিয়ে বলতে চাও, ঘোড়াটা ষে চলে না বহুকাল