পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষরক্ষা ১৩৭ সোনার বঁাশি বাজাও, রসিক, 龜 রসের নবীন নাটে । বিনোদ । চন্দরদী, কে বলে তুমি কবি নও? চন্দ্রকান্ত । ছায়ায় পড়ে গেছি ভাই, চন্দ্রগ্রহণ লেগেছে— তোমরা না থাকলে আমিও কবি বলে চলে যেতে পারতুম, কবিসম্রাট নাও যদি হতুম অন্তত কবি-তালুকদার হওয়া অসম্ভব ছিল না। দেখেছি, প্রাণের ভিতরটাতে মাঝে মাঝে রস উছলে ওঠে, কিন্তু তার ধারাটা মাসিকপত্র পর্যন্ত পৌছয় না। বিনোদ । ঘরে আছে রসসমূদ্র, সেইখানেই লুপ্ত হয়ে যায় ! চন্দ্রকান্ত। এক্সেলেন্ট । কবি না হলে এই গৃঢ় খবর আন্দাজ করতে পারত কে বলে। ঐ যে আসছে আমাদের মেডিকাল স্টডেণ্ট । গদাইয়ের প্রবেশ চন্দ্রকান্ত । এই যে, গদাই ! শরীরতত্ত্ব ছেড়ে হঠাৎ কবির দরবারে যে ? তোমার বাবা জানলে যে শিউরে উঠবেন। গদাই । না ভাই, প্যাথলজি স্টাডি করবার পক্ষে তোদের সংসর্গটা একেবারেই ব্যর্থ নয়। তোদের হৃদয়টা যে সর্বদাই আইটাই করছে, সেটা অজীর্ণ রোগের একটি নামান্তর তা জানিস ? বেশ ভালো করে আহারটি করলে এবং সেটি হজম করতে পারলে কবিত্বরোগ কাছে ঘেষতে পারে না । আধ-পেটা করে থাও, অম্বলের ব্যামোটি বাধাও, আর অমনি কোথায় আকাশের চাদ, কোথায় দক্ষিণের বাতাস, কোথায় কোকিলপক্ষীর ডাক, এই নিয়ে প্রাণ আনচান করতে থাকে ; জানলার কাছে বসে বসে মনে হয় কী যেন চাও, যা চাও সেটি ষে বাই-কার্বোনেট-অফ-সোডা তা কিছুতেই বুঝতে পার না । চন্দ্রকান্ত । হৃদযন্ত্রটির বাসা পাকযন্ত্রের ঠিক উপরেই, এ কথা কবির মানে না, কিন্তু কবিরাজরা মানে । গদাই। ঐ যে ষাকে ভালোবাসা বল সেটা যে শুদ্ধ একটা স্বায়ুর ব্যামো, তার আর সন্দেহ নাই। আমার বিশ্বাস অন্যান্ত ব্যামোর মতো তারও একটা ওষুধ বের হবে। চন্দ্রকান্ত । হবে বৈকি। কাগজে বিজ্ঞাপন বেরোবে— ‘হৃদয়-বেদনার জন্ত অতি উত্তম মালিশ, উত্তম মালিশ, উত্তম মালিশ ! বিরহনিবারণী বটিকা ; রাত্রে একটি সকালে একটি সেবন করিলে বিরহভার একেবারে নিঃশেষে অবসান ।” আচ্ছা, ভাই বিহু, এক কথায় বলে দে দেখি কিরকম মেয়ে তোর পছন্দ ।