পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় 8brd মুকুট পড়ল খসে ধুলোয় আমার পায়ের কাছে, সংকোচে চাইলুম পা সরিয়ে নিতে— তুমি বললে, থাক্ থাক্। সেদিন আমার ফাদ পাতা ছিল বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে— কলকণ্ঠের কাকলীতে, মানঅভিমানের ছলনায়, অকারণ হাসির কল্লোলে। রসে রঙে এ ঘরের বেড়াজাল ছিল ঠাসবুহ্বনি করা। তুমি তোমার দিগ্বিজয়ী চালের মন্থর ভঙ্গীতে পা ফেললে ঠিক তার মাঝখানটাতে। বারে বারে চেয়ে দেখলুম কটাক্ষে, মনে মনে হাসলুম তোমার দুই চক্ষুর বিহ্বলতায় । কোন ফাকে এসে পড়ল আর-এক মায়াবিনী— রণিতা। আমরা এক ব্যবসায়ের ব্যবসায়িনী। দেখলুম তার ফাসটাতে অল্প-একটু টান দিতেই বন্দী তখনি এক দিক থেকে আর-এক দিকে পড়ল হেলে। ভোজের বাহুল্যে ওর ক্ষুধা হয়েছিল অলস, সেই শিথিল অবস্থায় পথ্য ছিল তড়িদবেগে এক চুমুকের সুধারস। সেটা বুঝে নিয়েছিল যাদুকরী। বোধ হয় জান না মেয়েতে মেয়েতে বাজি রাখা পণ অাছে ভিতরে ভিতরে । রণিত এল আমার দরজায়। আমার মুখে সে চাইলে, আমি চাইলুম তার মুখে । পাশা ফেলল তার হাতের এক ঘুরুনিতেই, এক দানেই হল জিত। তুমি গেলে চলে, মনেও পড়ল না একটা সামান্ত রকম অছিলা করে যেতে | হাসতে চেষ্টা করি সঙ্গিনীরা যখন শুধায় হল কী । রণিতাকেও একদিন জবাব দিতে হবে ঐ প্রশ্নেরই শুকনো হাসি দিয়ে। বেশি দেরি নেই। পালা ফুরল, এবার প্যাক করতে হবে । অনাহূত সাহায্য করতে এল রমেশ— ঐটুকুই তার লাভ। লেগে গেল আস্তিন গুটিয়ে। কাচের শিশি মুড়তে লাগল খবরের কাগজে, কিছু বা জড়িয়ে দিল ছেড়া মোজায়। চামড়ার বাক্সোয় সাবধানে সাজিয়ে দিলে হাত-আয়না, রুপোর বাধানো চিরুনি, নর্থ-কাটা কাচি, চুলের তেল, ওটেনের মলম, পাউডারের কোটো, সাবানের বাটি। অবসাদের ভারে অচল ছিল আমার মন, গা লাগছিল না কিছুতে হাত লাগাতে, কেবল বসে বসে ছিড়ছিলুম কুটিকুটি করে পুরনো চিঠিগুলো । ব্যবহার-করা শাড়িগুলো নানা নিমন্ত্রণদিনের ফিকে গন্ধ মিলিয়ে দিল ঘরের হাওয়ায় । সেগুলো বিছিয়ে বিছিয়ে দুই হাতে চেপে চেপে পাট করে দিতে অসম্ভব সময় নিচ্ছিল রমেশ । আমার জরির-কাজ-করা স্লিপারের এক-একটা পাটি নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মুছে দিচ্ছিল কেঁাচার কাপড়ে, কোনো আবশ্বক ছিল না। চৌকির উপর দাড়িয়ে দেয়াল থেকে সে খসিয়ে নিল ছবিগুলো । মোটা কাপেটট