পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষরক্ষা S8S পাশের ঘরে চন্দ্রকান্ত ও ক্ষাস্তমণি চক্সকান্ত । বড়োবউ, ও বড়োবউ ! চাবিটা দাও দেখি । ক্ষান্তমণি । কেন জীবনসর্বস্ব নয়নমণি, দাসীকে কেন মনে পড়ল ? চন্দ্রকান্ত । ও আবার কি ! যাত্রার দল খুলবে নাকি ? আপাতত একটা সাফ দেখে চাদর বের করে দাও দেখি, এখনি বেরোতে হবে— ক্ষাস্তমণি । ( অগ্রসর হইয়া ) আদর চাই ! প্রিয়তম, তা আদর করছি । চন্দ্রকান্ত । ( পশ্চাতে হঠিয়া ) আরে, ছিছি ছি ! ও কী ও ! ক্ষান্তমণি। নাথ, বেলফুলের মালা গেথে রেখেছি, এখন কেবল চাদ উঠলেই হয়— চন্দ্রকান্ত । ও । গুণবর্ণনা আড়াল থেকে সমস্ত শোনা হয়েছে দেখছি। বড়োবউ, কাজটা ভালো হয় নি। ওটা বিধাতার অভিপ্রায় নয়। তিনি মানুষের শ্রবণশক্তির একটা সীমা ঠিক করে দিয়েছেন, তার কারণই হচ্ছে পাছে অসাক্ষাতে ষে কথাগুলো হয় তাও মানুষ শুনতে পায় ; তা হলে পৃথিবীতে বন্ধুত্ব বল, আত্মীয়তা বল, কিছুই টিকতে পারে না । ক্ষাস্তমণি । ঢের হয়েছে গোসাইঠাকুর, আর ধর্মোপদেশ দিতে হবে না। আমাকে তোমার পছন্দ হয় না, না ? চন্দ্রকান্ত । কে বললে পছন্দ হয় না ? ক্ষাস্তমণি । আমি গদ্য, আমি পদ্য নই, আমি শোলোক পড়ি নে, আমি বেলফুলের মালা পরাই নে— চন্দ্রকান্ত। আমি গললীকৃতবস্ত্র হয়ে বলছি, দোহাই তোমার, তুমি শোলোক পোড়ে না, তুমি মালা পরিয়ো না, ওগুলো সবাইকে মানায় না— ক্ষান্তমণি। কী বললে ? চন্দ্রকান্ত । আমি বললুম যে, বেলফুলের মালা আমাকে মানায় না, তার চেয়ে সাফ চাদরে ঢের বেশি শোভা হয়— পরীক্ষা করে দেখো । ক্ষান্তমণি । ষাও যাও, আর ঠাট্ট ভালো লাগে না । চন্দ্রকান্ত । (নিকটে আসিয়া ) কথাটা বুঝলে না ভাই ? কেবল রাগই করলে ! শোনো, বুঝিয়ে দিচ্ছি— ভালোবাসার থার্মোমিটারে তিন মাত্রার উত্তাপ আছে। মানুষ যখন বলে ‘ভালোবালি নে সেটা হল ৯৫ ডিগ্রি, যাকে বলে সাবনর্মাল। যখন বলে ‘ভালোবাসি’ সেটা হল