পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন Obr@ আদেশ কোন কোন মন্দ কাজ করবে না তার বিশেষ উল্লেখ করে সেইগুলিকে ধর্মশাস্ত্র ঈশ্বরের বিশেষ নিষেধরূপে প্রচার করেছেন । সেরকম ভাবে প্রচার করলে মনে হয় যেন ঈশ্বর কতকগুলি নিজের ইচ্ছামত আইন করে দিয়েছেন সেই আইনগুলি লঙ্ঘন করলে বিশ্বরাজের কোপে পড়তে হবে । সে কথাটাকে এইরূপ ক্ষুদ্র ও কৃত্রিমভাবে মানতে পারি নে। তিনি কোনো বিশেষ আদেশ জানান নি, কেবল র্তার একটি আদেশ তিনি ঘোষণা করেছেন, সমস্ত বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের উপরে তার সেই আদেশ, সেই একমাত্র আদেশ । তিনি কেবলমাত্র বলেছেন, প্রকাশিত হও। স্বর্ধকেও তাই বলেছেন, পৃথিবীকেও তাই বলেছেন, মানুষকে ও তাই বলেছেন । স্বৰ্ষ তাই জ্যোতির্ময় হয়েছে, পৃথিবী তাই জীবধাত্রী হয়েছে, মাছুষকেও তাই আত্মাকে প্রকাশ করতে হবে । বিশ্বজগতের যে-কোনো প্রাস্তে র্তার এই আদেশ বাধা পাচ্ছে, সেইখানেই কুঁড়ি মুষড়ে যাচ্ছে, সেইখানেই নদী স্রোতোহীন হয়ে শৈবালজালে রুদ্ধ হচ্ছে—সেইখানেই বন্ধন বিকার বিনাশ । বুদ্ধদেব যখন বেদনাপূর্ণ চিত্তে ধ্যান দ্বারা এই প্রশ্নের উত্তর খুজেছিলেন যে, মানুষের বন্ধন বিকার বিনাশ কেন, দুঃখ জরা মৃত্যু কেন, তখন তিনি কোন উত্তর পেয়ে আনন্দিত হয়ে উঠেছিলেন ? তখন তিনি এই উত্তরই পেয়েছিলেন যে, মাকুব আত্মাকে উপলব্ধি করলেই আত্মাকে প্রকাশ করলেই মুক্তিলাভ করবে। সেই প্রকাশের বাধাতেই তার দুঃখ—সেইখানেই তার পাপ । এইজন্যে তিনি প্রথমে কতকগুলি নিষেধ স্বীকার করিয়ে মানুষকে শীল গ্রহণ করতে আদেশ করেন। তাকে বললেন তুমি লোভ ক’রো না, হিংসা করে না, বিলাসে আসক্ত হ’য়ে না। যে-সমস্ত আবরণ তাকে বেষ্টন করে ধরেছে সেইগুলি প্রতিদিনের নিয়ত অভ্যাসে মোচন করে ফেলবার জন্তে তাকে উপদেশ দিলেন । সেই আবরণগুলি মোচন হলেই আত্মা আপনার বিশুদ্ধ স্বরূপটি লাভ করবে। সেই স্বরূপটি কী ? শূন্তত নয়, নৈষ্কর্ম্য নয়। সে হচ্ছে মৈত্রী, করুণ, নিখিলের প্রতি প্রেম। বুদ্ধ কেবল বাসনা ত্যাগ করতে বলেন নি তিনি প্রেমকে বিস্তার করতে বলেছেন। কারণ এই প্রেমকে বিস্তারের দ্বারাই আত্মা আপন স্বরূপকে পায়—স্বৰ্ষ যেমন আলোককে বিকীর্ণ করার দ্বারাই আপনার স্বভাবকে পায়। সর্বলোকে আপনাকে পরিকীর্ণ করা আঞ্চার ধর্ম—পরমাত্মারও সেই ধর্ম। তার