পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী নাইকো খেয়াল কখন সকাল পেরোয় দুপুর রেশমি ডানায় যায় চলে তার হালকা বেলা । চিনতে যদি চাও তাহারে এসো তবে, দ্বারের ফঁাকে দাড়িয়ে থেকে আমার পিছু । শুধাও যদি প্রশ্ন কোনো তাকিয়ে রবে বোকার মতন— বলার কথা নেই-যে কিছু । ধুলোয় লোটে রাঙাপাড়ের আঁচলখানা, দুই চোখে তার নীল আকাশের স্বৰ্দর ছুটি ; কানে কানে কে কথা কয় যায় না জানা, মুখের পরে কে রাখে তার নয়নছুটি । মর্মরিত হামল বনের কাপন থেকে চমকে নামে আলোর কণা আলগা চুলে ; তাকিয়ে দেখে নদীর রেখা চলছে বেঁকে— দোয়েল-ডাকা ঝাউয়ের শাখা উঠছে দুলে। সম্মুখে তার বাগান-কোণায় কামিনী ফুল আনন্দিত অপব্যয়ে পাপড়ি ছড়ায় । বেড়ার ধারে বেগনিগুচ্ছে ফুল্ল জারুল দখিন-হাওয়ার সোহাগেতে শাখা নড়ায় । তরুণ রৌদ্রে তপ্ত মাটির মৃদুশ্বাসে তুলসীঝোপের গন্ধটুকু ঢুকছে ঘরে। খামখেয়ালি একটা ভ্রমর আশে-পাশে গুঞ্জরিয়া যায় উড়ে কোন বনাস্তরে । পাঠশালা সে ফাকি দিয়ে পালিয়ে এড়ায়, শেখার মতো কোনো কিছুই হয় নি শেখা ; আলোছায়ায় ছন্দ তাহার খেলিয়ে বেড়ায় আলুর্থালু অবকাশের অবুঝ লেখা। সবুজ সোনা নীলের মায়া ঘিরল তাকে ; শুকনো ঘাসের গন্ধ আসে জানলা ঘুরে ; পাতার শব্দে, জলের শবো, পাখির ডাকে প্রহরটি তার আঁকাজোকা নানান স্বরে।