পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঁাশরি ➢ ሰዓ অৰ্চনা। কী চমৎকার। আমি যখন থালায় কেক সন্দেশ গোছাচ্ছিলুম আপনি ততক্ষণ কথাটা বানিয়ে নিচ্ছিলেন। সাত জন্ম উপোষ করে থাকলেও আমার মুখ দিয়ে এমন ঝকঝকে কথাটা বেরত না । তা যাক গে ; পরিচয় নেই, তবু এলুম কাছে, কিছু মনে করবেন না। পরিচয় দেবার মতো নেই বিশেষ কিছু। বালিগঞ্জ থেকে টালিগঞ্জে যাবার ভ্রমণবৃত্তাস্তও কোনো মাসিকপত্রে আজ পর্যন্ত ছাপাই নি। আমার নাম অৰ্চনা সেন। ঐ-যে অপরিচিত ছোটো মেয়েটি বেশী দুলিয়ে বেড়াচ্ছে, আমি তারই অখ্যাত কাকী । ক্ষিতীশ । এবার তা হলে আমার পরিচয়টা— o অর্চনা। বলেন কী। পাড়াগেয়ে ঠাওরালেন আমাকে ? শেয়ালদ-স্টেশনে কি গাইড রাখতে হয় চেচিয়ে জানাতে যে কলকাতা শহরটা রাজধানী। এই পরশুদিন পড়েছি আপনার বেমানান গল্পটা। পড়ে হেসে মরি আর-কি। ও কী । প্রশংসা শুনতে আজও আপনার লজ্জা বোধ হয় ? খাওয়া বন্ধ করলেন যে ? আচ্ছা, সত্যি বলুন, নিশ্চয় ঘরের লোক কাউকে লক্ষ্য করে লিখেছেন। রক্তের যোগ না থাকলে অমন অদ্ভূত স্থষ্টি বানানো যায় না। ঐ-যে, যে জায়গাটাতে মিস্টার কিষেণ গাস্ট বি. এ ক্যান্টাব, মিস্ লোটিকার পিঠের দিকের জামার ফাক দিয়ে আঙটি ফেলে দিয়ে খানাতল্লাশির দাবি করে হো-হা বাধিয়ে দিলে। আমার বন্ধুরা সবাই পড়ে বললে, ম্যাচ লেস— বঙ্গসাহিত্যে এ জায়গাটার দেশলাই মেলে না, একটু পোড়াকাঠিও না। আপনার লেখা ভয়ানক রিয়লিস্টিক ক্ষিতীশবাবু। ভয় হয় আপনার সামনে দাড়াতে । ক্ষিতীশ । আমাদের দুজনের মধ্যে কে বেশি ভয়ংকর, বিচার করবেন বিধাতাপুরুষ। অৰ্চনা। না, ঠাট্টা করবেন না। সিঙাড়াটা শেষ করে ফেলুন। আপনি ওস্তাদ, ঠাট্রায় আপনার সঙ্গে পারব না। মোস্ট ইণ্টারেটিং আপনার বইখানা। এমন সব মানুষ কোখাও দেখা যায় না। ঐ-যে মেয়েটা কী তার নাম— কথায় কথায় হাপিয়ে উঠে বলে, মাই আইজ, ও গড– লাজুক ছেলে স্তাণ্ডেলের সংকোচ ভাঙবার জন্তে নিজে মোটর হাকিয়ে ইচ্ছে করে গাড়িটা ফেললে খাদে, মতলব ছিল স্তাণ্ডেলকে দুই হাতে তুলে পতিতোদ্ধার করবে। , হবি তো হ স্তাণ্ডেলের হাতে হল কম্পউণ্ড ফ্র্যাচার। কী ড্রামাটিক, রিয়ালিজমের চূড়ান্ত ! ভালোবাসার এতবড়ো আধুনিক পদ্ধতি বেদব্যাসের জানা ছিল না। ভেবে দেখুন, স্বভত্রার কত বড়ো চান্স, মারা গেল, আর অর্জনেরও কজি গেল বেঁচে ।