পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ॐ२8 রবীন্দ্র-রচনাবলী রাজসরকারের দ্বারস্থ হয়েছি সেই উপলঞ্জোমাদের নৈষ্কর্ম্যকে নিবিড়তর করে তুলেছি মাত্র। কারণ, ইংরেজ-রাজসরকারের কীর্তি আমাদের কীর্তি নয়, এইজন্ত বাহিরের দিক থেকে সেই কীর্তিতে আমাদের যতই উপকার হোক, ভিতরের দিক থেকে তার দ্বারা আমাদের দেশকে আমরা হারাই, অর্থাৎ আত্মার মূল্যে সফলতা পাই । যাজ্ঞবল্ক্য বলেছেন : ন বা অরে পুত্রস্ত কামায় পুত্রঃ প্রিয়ো ভবতি, আত্মনস্তু কামায় পুত্র: প্রিয়ো ভবতি। দেশ সম্বন্ধেও এই কথা খাটে। দেশ আমারই আত্মা, এইজন্তই দেশ আমার প্রিয়— এ কথা যখন জানি তখন দেশের স্বষ্টিকার্যে পরের মুখাপেক্ষ করা সহই হয় না। আমি সেদিন দেশকে যে কথা বলবার চেষ্টা করেছিলুম সে বিশেষ-কিছু নতুন কথা নয় এবং তার মধ্যে এমন-কিছু ছিল না যাতে স্বদেশহিতৈষীর কানে সেটা কটু শোনায়। কিন্তু আর-কারো মনে না থাকতে পারে, অামার স্পষ্টই মনে আছে যে, আমার এই-সকল কথায় দেশের লোক বিষম ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছিল। যারা কটুভাষাব্যবসায়ী সাহিত্যিক গুণ্ডা আমি তাদের কথা বলছি নে, কিন্তু গণ্যমান্ত এবং শিষ্টশান্ত ব্যক্তিরাও আমার সম্বন্ধে ধৈর্য রক্ষা করতে পারেন নি। এর দুটি মাত্র কারণ ; প্রথম— ক্রোধ, দ্বিতীয়— লোভ। ক্রোধের তৃপ্তিসাধন হচ্ছে এক রকমের ভোগমুখ ; সেদিন এই ভোগস্থখের মাংলামিতে আমাদের বাধা অতি অল্পই ছিল— আমরা মনের আনন্দে কাপড় পুড়িয়ে বেড়াচ্ছি, পিকেট করছি, যারা আমাদের পথে চলছিল না তাদের পথে কাটা দিচ্ছি এবং ভাষায় আমাদের কোনো আব্রু রাখছি নে । এই সকল অমিতাচারের কিছুকাল পরে একজন জাপানি আমাকে একদিন বলেছিলেন, “তোমরা নিঃশব্দে দৃঢ় এবং গৃঢ় ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করতে পার না কেন। কেবলই শক্তির বাজে খরচ করা তো উদ্দেপ্তসাধনের সদুপায় নয়।” তার জবাবে সেই জাপানিকে আমার বলতে হয়েছিল যে, "উদেশ্বসাধনের কথাটাই যখন আমাদের মনে উজ্জল থাকে তখন মানুষ স্বভাবতই আত্মসংযম করে নিজের সকল শক্তিকেই সেই দিকে নিযুক্ত করে । কিন্তু ক্রোধের তৃপ্তিসাধন যখন মত্ততার সপ্তকে সপ্তকে উদ্দেশুসাধনকে ছাড়িয়ে উঠতে থাকে তখন শক্তিকে খরচ করে দেউলে হতে আমাদের বাধা থাকে না।” যাইহোক-সেদিন ঠিক যে সময়ে বাঙালি কিছুকালের জন্তে ক্ৰোধতৃপ্তির মুখভোগে বিশেষ বিন্ন পাচ্ছিল না, সমস্তই যেন একটা আশ্চর্য স্বপ্নের মতো বোধ হচ্ছিল, সেই সময়ে তাকে অন্ত পথের কথা বলতে গিয়ে আমি তার ক্রোধের ভাজন হয়েছিলেম। তা ছাড়া আরও একটি কথা ছিল, সে হচ্ছে লোভ ৷ ইতিহাসে সকল জাতি দুর্গম পথ দিয়ে দুর্লভ জিনিস পেয়েছে, জামরা তার চেয়ে