পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*歌 २४ 9 দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ । ছেলেটির নাম হইল নীলমণি । তাহার বয়স যখন দুই বৎসর তখন তাহার পিতার কঠিন পীড়া হইল। অতি শীঘ্ৰ চলিয়া আসিবার জন্ত জয়গোপালের নিকট পত্র গেল । জয়গোপাল যখন বহু চেষ্টায় ছুটি লইয়া আসিয়া পৌছিল তখন কালীপ্রসঙ্গের মৃত্যুকাল উপস্থিত । মৃত্যুর পূর্বে কালীপ্রসন্ন নাবালক ছেলেটির তত্ত্বাবধানের ভার জয়গোপালের প্রতি অর্পণ করিয়া তাহার বিষয়ের সিকি অংশ কন্যার নামে লিখিয়া দিলেন। সুতরাং বিষয়রক্ষার জন্য জয়গোপালকে কাজ ছাড়িয়া দিয়া চলিয়া আসিতে হইল। অনেকদিনের পরে স্বামীস্ট্রীর পুনর্মিলন হইল। একটা জড়পদার্থ ভাঙিয়া গেলে আবার ঠিক তাহার খাঁজে খাজে মিলাইয়। দেওয়া যায়, কিন্তু দুটি মানুষকে যেখানে বিচ্ছিন্ন করা হয় দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর আর ঠিক সেখানে রেখায় রেখায় মেলে না। কারণ, মন জিনিসটা সজীব পদার্থ, নিমেষে নিমেষে তাহার পরিণতি এবং পরিবর্তন। শশীর পক্ষে এই নূতন মিলনে নূতন ভাবের সঞ্চার হইল। সে যেন তাহার স্বামীকে ফিরিয়া বিবাহ করিল। পুরাতন দাম্পত্যের মধ্যে চিরাভ্যাসবশত যে এক অসাড়ত জন্মিয়া গিয়াছিল, বিরহের আকর্ষণে তাহা অপস্থত হইয়া সে তাহার স্বামীকে যেন পূর্বাপেক্ষা সম্পূর্ণতর ভাবে প্রাপ্ত হইল ; মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিল, যেমন দিনই আমুক, যতদিনই যাক, স্বামীর প্রতি এই দীপ্ত প্রেমের উজ্জলতাকে কখনোই মান হইতে দিব না। নূতন মিলনে জয়গোপালের মনের অবস্থাটা অন্তরূপ। পূর্বে যখন উভয়ে অবিচ্ছেদে একত্রে ছিল, যখন স্ত্রীর সহিত তাহার সমস্ত স্বার্থের এবং বিচিত্র অভ্যাসের ঐক্যবন্ধন ছিল, স্ত্রী তখন জীবনের একটি নিত্য সত্য হইয়াছিল— তাহাকে বাদ দিতে গেলে দৈনিক অভ্যাসজালের মধ্যে সহসা অনেকখানি ফাক পড়িত। এইজন্য বিদেশে গিয়া জয়গোপাল প্রথম প্রথম অগাধ জলের মধ্যে পড়িয়াছিল। কিন্তু ক্রমে তাহার সেই অভ্যাসবিচ্ছেদের মধ্যে নূতন অভ্যাসের তালি লাগিয়া গেল। কেবল তাহাই নহে। পূর্বে নিতান্ত নিশ্চেষ্ট নিশ্চিন্তভাবে তাহার দিন কাটিয়া বাইত। মাঝে দুই বৎসর অবস্থা-উন্নতি-চেষ্টা তাহার মনে এমন প্রবলভাবে জাগিয়া উঠিয়াছিল যে, তাহার মনের সম্মুখে আর কিছুই ছিল না। এই নৃতন নেশার তীব্রতার তুলনায় তাহার পূর্বজীবন বস্তুহীন ছায়ার মতো দেখাইতে লাগিল। স্ত্রীলোকের প্রকৃতিতে প্রধান পরিবর্তন ঘটায় প্রেম, এবং পুরুষের ঘটায় দুশ্চেষ্টা ।