পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

く〉や রবীন্দ্র-রচনাবলী এখন তাহার বয়স দশ হইয়াছে। এই দুই বৎসরে সে ইংরাজি ও বাংলা বর্ণমালা শিখিয়া দুই-চারিট সহজ বই পড়িয়া ফেলিয়াছে। এবং শশিভূষণের পক্ষেও পল্লীগ্রাম এই দুই বৎসর নিতান্ত সঙ্গবিহীন বিরস বলিয়া বোধ হয় নাই । তৃতীয় পরিচ্ছেদ কিন্তু গিরিবালার বাপ হরকুমারের সহিত শশিভূষণের ভালোরূপ বনিবনাও হয় নাই। হরকুমার প্রথম প্রথম এই এম. এ. বি এলের নিকট মকদ্দমা মামলা সম্বন্ধে পরামর্শ লইতে আসিত। এম. এ. বি এল. তাহাতে বড়ো-একটা মনোযোগ করিত না এবং আইনবিদ্যা সম্বন্ধে নায়েবের নিকট আপন অজ্ঞতা স্বীকার করিতে কুষ্ঠিত হইত না । নায়েব সেটাকে নিতান্তই ছল মনে করিত। এমনভাবে বছর দুয়েক কাটিল । সম্প্রতি একটা অবাধ্য প্রজাকে শাসন করা আবশ্বক হইয়াছে। নায়েব মহাশয় তাহার নামে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় ভিন্ন ভিন্ন অপরাধ ও দাবিতে নালিশ রুজু করিয়া দিবার অভিপ্রায় প্রকাশ করিয়া পরামর্শের জন্য শশিভূষণকে কিছু বিশেষ পীড়াপীড়ি করিয়া ধরিলেন। শশিভূষণ পরামর্শ দেওয়া দূরে থাক, শাস্ত অথচ দৃঢ়ভাবে হরকুমারকে এমন গুটিদুই-চারি কথা বলিলেন যাহা তাহার কিছুমাত্র মিষ্ট বোধ হইল না। এ দিকে আবার প্রজার নামে একটি মকদ্দমাতেও হরকুমার জিতিতে পারিলেন না । তাহার মনে দৃঢ় ধারণা হইল শশিভূষণ উক্ত হতভাগ্য প্রজার সহায় ছিল । তিনি প্রতিজ্ঞা করিলেন, এমন লোককে গ্রাম হইতে অবিলম্বে তাড়াইতে হইবে । শশিভূষণ দেখিলেন, তাহার খেতের মধ্যে গোরু প্রবেশ করে, তাহার কলাইয়ের খোলায় আগুন লাগিয়া যায়, তাহার সীমানা লইয়া বিবাদ বাধে, তাহার প্রজারা সহজে খাজনা দেয় না এবং উলটিয়া তাহার নামে মিথ্যা মকদ্দমা আনিবার উপক্রম করে— এমন-কি, সন্ধ্যার সময় পথে বাহির হইলে তাহাকে মারিবে এবং রাত্রে তাহার বসতবাটীতে আগুন লাগাইয়া দিবে, এমন-সকল জনশ্রুতিও শোনা যাইতে লাগিল । অবশেষে শাস্তিপ্রিয় নিরীহ প্রকৃতি শশিভূষণ গ্রাম ছাড়িয়া কলিকাতায় পালাইবার আয়োজন করিলেন । যাত্রার উদ্যোগ করিতেছেন এমন সময়ে গ্রামে জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের তাবু পড়িল । বরকন্দাজ কনস্টেবল খানসামা কুকুর ঘোড়া সহিস মেথরে সমস্ত গ্রাম চঞ্চল হইয়া উঠিল। ছেলের দল ব্যান্ত্রের অম্বুবতী শৃগালের পালের ন্যায় সাহেবের আডার নিকটে শঙ্কিত কৌতুহল সহকারে ঘুরিতে লাগিল ।