পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী । . دهه উখিত ওঙ্কারধ্বনিরই স্বর। বিশ্ব বলছে ওঁ ; বলছে, ই ; বলছে, জয়মহং ভো, এই-বে আমি। ওই মেয়েটিও সেই ওঁ, সেই ই, সেই এই-ষে আমি। সত্তাকে সত্তা বলেই ৰেখানে মানি সেখানে তার মধ্যে আমি সেই খুশিকেই দেখি ষে খুশি আমার নিজের মধ্যে চরমরূপে রয়েছে। দাসের মধ্যে সেই খুশিকে দেখি নে বলেই দাসত্ব এত ভয়ংকর মিথ্যে, আর মিথ্যে বলেই এত ভয়ংকর তার পীড়া । _. স্বাক্টর মূলে এই লীলা, নিরন্তর এই রূপের প্রকাশ। . সেই প্রকাশের অহৈতুক আনন্দে যখন যোগ দিতে পারি তখন স্বটির মূল আনন্দে গিয়ে মন পৌছয়। সেই মূল আনন্দ আপনাতেই আপনি পর্যাপ্ত, কারো কাছে তার কোনো জবাবদিহি নেই। ছোটাে ছেলে ধুলোমাটি কাটাকুটাে নিয়ে সারাবেল বসে বসে একটা কিছু গড়ছে। বৈজ্ঞানিকের মোটা কৈফিয়ত হচ্ছে এই যে, গড়বার শক্তি তার জীবনযাত্রার সহায়, সেই শক্তির চালনা চাই। এ কৈফিয়ত স্বীকার করে নিলুম ; তবুও কথাটার মূলের দিকে অনেকখানি বাকি থাকে ! গোড়াকার কথা হচ্ছে এই যে, তার স্বষ্টিকর্তা মন বলে ."হোক", "Let there be”— সেই বাণীকে বহন করে ধুলোমাটি কুটোকাটি সকলেই বলে ওঠে, “এই দেখো হয়েছে।” _ এই হওয়ার অনেকখানিই আছে শিশুর কল্পনায়। সামনে যখন তার একটা চিবি তখন কল্পনা বলছে, “এই তো আমার রূপকথার রাজপুত্রের কেরা। তার ওই ধুলোর স্তুপের ইশারার ভিতর দিয়ে শিশু সেই কেল্লার সত্তা মনে স্পষ্ট অনুভব করছে ; এই অনুভূতিতেই তার আনন্দ ৷ গড়বার শক্তিকে প্রকাশ করছি বলে আনন্দ নয়, কেননা, সে শক্তি এ ক্ষেত্রে বিশেষ প্রকাশ পাচ্ছে না। একটি রূপবিশেষকে চিত্তে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি বলে আনন্দ। সেই রূপটাকে শেষলক্ষ্য করে দেখাই হচ্ছে স্বষ্টিকে দেখা ; তার আনন্দই স্বষ্টির মূল আনন্দ । গান জিনিসটা নিছক স্বষ্টিলীলা । ইন্দ্ৰধন্থ যেমন বৃষ্টি আর রৌদ্রের জাদু, আকাশের দুটাে খামখেয়ালি মেজাজ-দিয়ে গড় তোরণ, একটি অপূর্ব মুহূর্তকাল সেই তোরণের নীচে দিয়ে জয়যুত্র করবে। হয়ে গেল এই খেলা, মুহূর্তটি তার রঙিন উত্তরীয় উড়িয়ে দিয়ে চলে গেল— তার বেশি আর কিছু নয়। মেজাজের এই রঙিন খেলাই হচ্ছে গীতিকাব্য। ওই ইন্দ্ৰধন্থর কবিটিকে পাকড়াও করে ঘদি জিজ্ঞাসা করা যেত এটার মানে কী হল” সাফ জবাব পাওয়া যেত “কিছুই না”। তবে ?” , “আমার খুশি ।” রূপেতেই খুশি– স্বাক্টর সব প্রশ্নের এই হল শেষ উত্তর । to I এই খুশির খেলাঘরে রূপের খেলা দেখে আমাদের মন ছুটি পায় বস্তর মোহ থেকে ; একেবারে পৌছয় আনন্দে, এমন কিছুতে যার ভার নেই, যার মাপ নেই, যা অনির্বচনীয়। ’ o -