পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাপানযাত্রী లి) (t পাকিয়ে ফুলে ফুলে উঠল। মুষলধারে বৃষ্টি। বিদ্যুৎ আমাদের জাহাজের চার দিকে তার তলোয়ার থেলিয়ে বেড়াতে লাগল। তার পিছনে পিছনে বজের গর্জন। একটা বজ ঠিক আমাদের সামনে জলের উপর পড়ল, জল থেকে একটা বাষ্পরেখা সাপের মতো ফোস করে উঠল। আর-একটা বজ পড়ল আমাদের সামনেকার মাস্তলে । রুদ্র যেন সুইটজারল্যাণ্ডের ইতিহাসবিশ্রুত বীর উইলিয়ম টেলের মতো তার অদ্ভুত ধন্থবিদ্যার পরিচয় দিয়ে গেলেন, মাস্তলের ডগাটায় তার বাণ লাগল, আমাদের স্পর্শ করল না। এই ঝড়ে আমাদের সঙ্গী আর-একটা জাহাজের প্রধান মাস্তুল বজ্ৰে বিদীর্ণ হয়েছে শুনলুম। মানুষ যে বঁাচে এই আশ্চর্য। 속 এই কয়দিন আকাশ এবং সমুদ্রের দিকে চোখ ভরে দেখছি আর মনে হচ্ছে, অনস্তের রঙ তো শুভ্র নয়, তা কালো কিম্বা নীল। এই আকাশ খানিক দূর পর্যস্ত আকাশ অর্থাৎ প্রকাশ, ততটা সে সাদা । তার পরে সে অব্যক্ত, সেইখান থেকে সে নীল । আলো যতদূর সীমার রাজ্য সেই পর্যন্ত ; তার পরেই অসীম অন্ধকার । সেই অসীম অন্ধকারের বুকের উপরে এই পৃথিবীর আলোকময় দিনটুকু ষেন কৌস্তুভমণির হার দুলছে । এই প্রকাশের জগৎ, এই গৌরাঙ্গী, তার বিচিত্র রঙের সাজ প’রে অভিসারে চলেছে— ওই কালোর দিকে, ওই অনির্বচনীয় অব্যক্তর দিকে। বাধা নিয়মের মধ্যে বাধা থাকাতেই তার মরণ– সে কুলকেই সর্বস্ব করে চুপ করে বসে থাকতে পারে না, সে কুল খুইয়ে বেরিয়ে পড়েছে। এই বেরিয়ে যাওয়া বিপদের যাত্রা ; পথে কাটা, পথে সাপ, পথে ঝড় বৃষ্টি— সমস্তকে অতিক্রম করে, বিপদকে উপেক্ষা করে সে ষে চলেছে, সে কেবল ওই অব্যক্ত অসীমের টানে। অব্যক্তর দিকে, ‘আরো’র দিকে প্রকাশের এই কুল-খোয়ানো অভিসারযাত্রা— প্রলয়ের ভিতর দিয়ে, বিপ্লবের কাটাপথে পদে পদে রক্তের চিহ্ন একে । কিন্তু কেন চলে, কোন দিকে চলে, ওদিকে তো পথের চিহ্ন নেই, কিছু তো দেখতে পাওয়া যায় না ? না, দেখা যায় না, সব অব্যক্ত কিন্তু শূন্ত তো নয় ; কেননা, ওই দিক থেকেই বঁশির স্বর আসছে। আমাদের চলা, এ চোখে দেখে চলা নয়, এ স্বরের টানে চলা । যেটুকু চোখে দেখে চলি সে তো বুদ্ধিমানের চলা, তার হিসাব আছে, তার প্রমাণ আছে ; সে ঘুরে ঘুরে কুলের মধ্যেই চল । সে চলায় কিছুই এগোয় না। আর যেটুকু বাশি শুনে পাগল হয়ে চলি, যে-চলায় মরা-বাচা জ্ঞান থাকে না, সেই পাগলের Տ ՋկՀ Տ r