পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ২৬৯ সকরুণ কৃশতা অঙ্কিত হইয়া আছে, যাহা দেখিলে হৃৎকম্পসহ মনে উদয় হয়, আহা বড়ো রক্ষা পাইয়াছে , 帕 কিন্তু কিরণের স্বভাবটা সঙ্গপ্রিয়, আমোদপ্রিয়। এখানে একলা আর ভালো লাগিতেছে না ; তাহার ঘরের কাজ নাই, পাড়ার সঙ্গিনী নাই ; কেবল সমস্ত দিন আপনার রুগ্ন শরীরটাকে লইয়া নাড়াচাড়া করিতে মন যায় না। ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাগ মাপিয়া ঔষধ খাও, তাপ দাও, পথ্য পালন করো, ইহাতে বিরক্তি ধরিয়া গিয়াছে ; আজ ঝড়ের সন্ধ্যাবেলায় রুদ্ধগৃহে স্বামীস্ত্রীতে তাহাই লইয়া আন্দোলন উপস্থিত হইয়াছিল। কিরণ যতক্ষণ উত্তর দিতেছিল ততক্ষণ উভয়পক্ষে সমকক্ষভাবে দ্বন্দ্বযুদ্ধ চলিতেছিল, কিন্তু অবশেষে কিরণ যখন নিরুত্তর হইয়া বিনা প্রতিবাদে শরতের দিক হইতে ঈষৎ বিমুখ হইয়া ঘাড় বাকাইয়া বসিল তখন দুর্বল নিরুপায় পুরুষটির আর কোনো অস্ত্র রহিল না। পরাভব স্বীকার করিবার উপক্রম করিতেছে, এমন সময় বাহির হইতে বেহার উচ্চৈঃস্বরে কী একটা নিবেদন করিল। শরৎ উঠিয়া দ্বার খুলিয়া শুনিলেন, নৌকাডুবি হইয়া একটি ব্রাহ্মণবালক সাতার দিয়া তাহদের বাগানে আসিয়া উঠিয়াছে। gf শুনিয়া কিরণের মান-অভিমান দূর হইয়া গেল, তৎক্ষণাৎ আলনা হইতে শুষ্কবন্ত্র বাহির করিয়া দিলেন এবং শীঘ্র একবাটি দুধ গরম করিয়া ব্রাহ্মণের ছেলেকে অস্তঃপুরে ডাকিয়া পাঠাইলেন। ছেলেটির লম্ব চুল, বড়ো বড়ো চোখ, গোফের রেখা এখনো উঠে নাই। কিরণ তাহাকে নিজে থাকিয়া ভোজন করাইয় তাহার পরিচয় জিজ্ঞাসা করিলেন। শুনিলেন, সে যাত্রার জলের ছোকরা, তাহার নাম নীলকান্ত । তাহারা নিকটবর্তী সিংহবাবুদের বাড়ি যাত্রার অন্য জাদ্ভূত হইয়াছিল ; ইতিমধ্যে নৌকাডুবি হইয় তাহাদের দলের লোকের কী গতি হইল কে জানে ; সে ভালো সাতার জানিত, কোনোমতে প্রাণরক্ষা করিয়াছে। ছেলেটি এইখানেই রহিয়া গেল। আর একটু হইলেই সে মারা পড়িত, এই মনে করিয়া তাহার প্রতি কিরণের অত্যন্ত দয়ার উদ্রেক হইল। শরৎ মনে করিলেন, হইল ভালো, কিরণ একটা নূতন কাজ হাতে পাইলেন, এখন কিছুকাল এইভাবেই কাটিয়া যাইবে। ব্রাহ্মণবালকের কল্যাণে পুণ্যসঞ্চয়ের প্রত্যাশায় শাশুড়িও প্রসন্নতা লাভ করিলেন। এবং অধিকারী মহাশয় ও ষমরাজের হাত হইতে সহসা এই ধনীপরিবারের হাতে বদলি হইয়া নীলকান্ত বিশেষ আরাম বোধ कब्रिज ।