পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©to ब्रदौटश-ब्रक्रमांवलौ আসবে এমন সম্ভাবনা নেই। যে সব খাদ্য তাদের অভ্যন্ত এবং রুচিকর তারই প্রলোভন পেলে তবেই তার আপনি জড় হয় নইলে কিছুতেই নয় । নিজেকে চারিদিকে কেবল ছড়াছড়ি করাটাই অভ্যাস হয়ে গেছে। চিন্তাও ছড়িয়ে পড়ে, কর্মও এলিয়ে যায়, কিছুই আঁট বাধে না । এরকম অবস্থায় যে কেবল সিদ্ধি নেই তা নয়, সত্যকার স্থখও নেই। এতে আছে কেবল জড়তার তামসিক আবেশমাত্র। কারণ, যখন আমাদের শক্তিকে প্রবৃত্তিকে কোনো উদ্বেপ্তের সঙ্গে যুক্ত করে দিই তখন সেই উদ্দেশুই তাদের বহন করে নিয়ে চলে। তখন তাদের ভার আর আমাদের নিজের ঘাড়ে পড়ে না। নতুবা তাদের বহন করে একবার এর উপর রাখছি একবার তার উপর রাখছি এমনি করে কেবলই টানাটানি করে নিয়ে বেড়াতে হয়। যখন কোথাও নামিয়ে রাখবার কোনো উপায় না পাই তখন রুত্রিম উপায় স্বষ্টি করতে থাকি। কতই বাজে খেলা, বাজে আমোদ, বাজে উপকরণ। অবশেষে সেই রুত্রিম আয়োজনগুলোও দ্বিতীয় বোঝা হয়ে আমাদের চতুদিকে চেপে ধরে। এমনি করে জীবনের ভার কেবলই জমে উঠতে থাকে, জীবনান্তকাল পর্যন্ত কোনোমতেই তার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাই নে । তাই বলছিলুম কেবলমাত্র সাধনার অবস্থাতেই একটা আনন্দ আছে সিদ্ধির কথা দূরে থাকৃ। মহংলক্ষ্য অনুসরণে নিজের বিক্ষিপ্ততাকে একাগ্র করে এনে তাকে এক পথে চালনা করলে তাতেই যেন প্রাণ বেঁচে যায়। যেটুকু সচেষ্টতা থাকলে আমরা সাধনাকে আনন্দ বলে কোমর বেঁধে বক্ষ প্রসারিত করে প্রবৃত্ত হতে পারি সেটুকুও যদি আমাদের ভিতর থেকে খয়ে গিয়ে থাকে তবে বড়ো বিপদ । যেমন করে হ’ক, বারংবার স্খলিত হয়েও সেই সমস্ত শক্তিকে একাগ্র করবার চেষ্টাকে শক্ত করে তুলতে হবে। শিশু যেমন পড়তে পড়তে আঘাত পেতে পেতে চলতে শেখে তেমনি করেই তাকে চলতে শেখাতে হবে। কেননা সিদ্ধিলাভে প্রথমে লক্ষ্যটা যে সত্য সেই বিশ্বাসটি জাগানো চাই, তার পরে লক্ষ্যটি বাইরে না ভিতরে, পরিধিতে না কেন্দ্রে সেটি জানা চাই, তার পরে চাই সোজা পথ বেয়ে চলতে শেখা। স্থৈৰ্ব এবং গতি দুই চাই । বিশ্বাসে চিত্ত স্থির হলে—এবং সাধনায় চেষ্টা গতি লাভ করবে। ১৬ ফাল্গুন ১৩১৫