পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२९ রবীন্দ্র-রচনাবলী আমার তিন বছরের প্রিয়সখী, স্বাকে নাম দিয়েছি নন্দিনী, তার হওয়ার উদ্বেগু কী এ প্রশ্নের কোনো জবাব-তলবের কথা মনে আসে না । সে-যে কুলরক্ষার সেতু, সে-বে পিও-জোগানের হেতু, সে-ষে কোনো এক ভাবীকালে প্ৰজনাৰ্থং মহাভাগ, এ-সব হল শাস্ত্রসংগত বিজ্ঞানসন্মত মূল্যের কথা। ফলের রে ফুলের বিচার ব্যাবসাদারের। কিন্তু, ভগবান তো সৃষ্টির ব্যাবসা ফারেন নি। তার স্বষ্টি একেবারেই বাজে খরচ ; অর্থাৎ, আয় করবার জন্যে খরচ করা নয়, এইজন্যই আয়োজনে প্রয়োজনে সমান হয়ে মিশে গেছে। এইজন্য ষে-শিশু জীবলোকের প্রয়োজনসাধনের পক্ষে অপূর্ণ, সেই তিন বছরের শিশুর অপূর্ণতাই স্বষ্টির আনন্দগৌরবে পূর্ণ। আমি তো দেখি বিশ্বরচনায় মুখ্যের চেয়ে গৌণটাই বড়ে । ফুলের রঙের মুখ্য কথাটা হতে পারে পতঙ্গের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ; গৌণ কথাটা হচ্ছে সৌন্দর্য। মানুষ যখন ফুলের বাগান করে তখন সেই গৌণের সম্পদই সে খোজে। বস্তুত, গৌণ নিয়েই মানুষের সভ্যতা। মানুষ কবি যখন প্রেয়সীর মুখের একটি তিলের জন্য সমরখন্দ বোখার পণ করতে বসে তখন সে প্রজনার্থং মহাভাগার কথা মনেই রাখে না। এই বে-হিসাবি স্বষ্টিতে বে-হিসাবি আনন্দরূপকেই সে স্বষ্টির ঐশ্বর্য বলে জানে। 臀 প্রাণীসংসারে জৈবপ্রকৃতিই সকলের গোড়ায় আপন ভিত ফেদে, জাজিম পেতে, আলো জেলে, পৃথিবীর ভাণ্ডার থেকে সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র মালমসলা নিজের ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করে নিয়ে সংসার পেতে বসেছিল। ভোরের বেলায় সে মুখ্য জায়গাটা দখল করে বসল। তারই বচন হচ্ছে, সা ভার্য যা প্রজাবতী। অর্থাৎ, যদি কাজে লাগল তবেই তার দাম । চিংপ্রকৃতি এসে জুটলেন কিছু দেরিতে। তাই, জৈবপ্রকৃতির আগ্রয়ে তাকে পরাভূত হতে হল। পুরানো পথে পুরানো ঘাটে পুরানো কালের মালমসলা নিয়েই সে ফাদলে তার নিজের ব্যাবসা । তখন সে সাবেক আমলের মুখ্য থেকে হাল আমলের গৌণ ফলিয়ে তুলতে বসল। আহারকে করে তুললে ভোজ, শব্দকে করে তুললে বাণী, কান্নাকে করে তুললে কাব্য। মুখ্যভাবে যেটা ছিল আঘাত গৌণভাবে সেটা হল আবেদন ; যেটা ছিল বন্দিনীর শৃঙ্খল, সেটা হল বধূর কঙ্কণ ; ষেটা ছিল ভয় সেটা হল ভক্তি ; যেটা ছিল দাসত্ব সেটা হল আত্মনিবেদন । যার উপরের স্তরের চেয়ে নীচের স্তরকে বিশ্বাস করে বেশি তারা মাটি খোড়াখুড়ি করতে গেলেই পুরাতন তাম্রশাসন বেরিয়ে পড়ে। বৈজ্ঞানিকের চশমায় ধরা পড়ে যে, খেতের মালিক জৈবপ্রকৃতি ; অতএব ফসলের অধিকার নির্ণয় করতে গেলে বৈজ্ঞানিকের কাছে চিৎপ্রকৃতির দাবি অগ্রাহ হয়ে আসে। আপিলে সে যতই