পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অচলায়তন ৩৭৩ দাদাঠাকুর। যিনি সব জায়গায় আপনি ধরা দিয়ে বসে আছেন তাকে একটা জায়গায় ধরতে গেলেই তাকে হারাতে হয়। আচার্য । তিনি যে আছেন এই খবরটা মনের মধ্যে পৌছায় নি বলেই মনে করে বসেছিলুম তাকে বুঝি কৌশল করে গড়ে তুলতে হয়। তাই দিনরাত বসে বসে এত ব্যর্থচেষ্টার জাল পাকিয়েছি। দাদাঠাকুর । তোমার যে কারাগারটাতে তোমার নিজেকেই অঁাটে না সেইখানে তাকে শিকল পরাবার আয়োজন না করে তারই এই খোলা মন্দিরের মধ্যে তোমার আসন পাতবার জন্যে প্রস্তুত হও । আচার্য। আদেশ করে প্রভু। ভুল করেছিলুম জেনেও সে ভুল ভাঙতে পারি নি। পথ হারিয়েছি তা জানতুম, যতই চলছি ততই পথ হতে কেবল বেশি দূরে গিয়ে পড়ছি তাও বুঝতে পেরেছিলুম, কিন্তু ভয়ে থামতে পারছিলুম না। এই চক্রে হাজার বার ঘুরে বেড়ানোকেই পথ খুজে পাবার উপায় বলে মনে করেছিলুম। দাদাঠাকুর । যে চক্র কেবল অভ্যাসের চক্র, যা কোনো জায়গাতেই নিয়ে যায় না, কেবল নিজের মধ্যেই ঘুরিয়ে মারে, তার থেকেই বের করে সোজা রাস্তায় বিশ্বের সকল যাত্রীর সঙ্গে দাড় করিয়ে দেবার জন্যেই আমি আজ এসেছি । আচার্য। ধন্ত করেছ। কিন্তু এতদিন আস নি কেন প্ৰভু ? অামাদের আয়তনের পাশেই এই দর্ভকপাড়ায় তুমি আনাগোনা করছ আর কত বৎসর হয়ে গেল আমাদের আর দেখা দিলে না ! দাদাঠাকুর। এদের দেখা দেওয়ার রাস্তা যে সোজা । তোমাদের সঙ্গে দেখা করা তো সহজ করে রাখ নি। পঞ্চক। ভালোই করেছি, তোমার শক্তি পরীক্ষা করে নিয়েছি। তুমি আমাদের পথ সহজ করে দেবে কিন্তু তোমার পথ সহজ নয়। এখন আমি ভাবছি তোমাকে ডাকব কী বলে ? দাদাঠাকুর, না গুরু ? দাদাঠাকুর। ষে জানতে চায় না যে আমি তাকে চালাচ্ছি আমি তার দাদাঠাকুর, আর ষে আমার আদেশ নিয়ে চলতে চায় আমি তার গুরু। পঞ্চক। প্রভু, তুমি তা হলে আমার দুইই। আমাকে আমিই চালাচ্ছি, আর আমাকে তুমিই চালাচ্ছ এই দুটােই আমি মিশিয়ে জানতে চাই। আমি শোণপাংশু না, তোমাকে মেনে চলতে ভয় নেই। তোমার মুখের আদেশকেই আনন্দে আমার মনের ইচ্ছা করে তুলতে পারব। এবার তবে তোমার সঙ্গে তোমারই বোঝা মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ি, ঠাকুর।