888 রবীন্দ্র-রচনাবলী সে-আয়তনে দেখি নে। আকাশকে আরো অনেক বেশি আণুবীক্ষণিক করে দেখতে পারলে গোলাপের পরমাণুপুঞ্জকে বৈদ্যুতিক যুগলমিলনের নৃত্যলীলারূপে দেখতে পারি, সে-আকাশে গোলাপ একেবারে গোলাপই থাকে না। অথচ, সে-আকাশ দূরস্থ নয়, স্বতন্ত্র নয়, এই আকাশেই। তাই পরম সত্যকে উপনিষৎ বলেছেন : তদেজতি তল্পৈজতি, একই কালে তিনি চলেনও তিনি চলেনও না । সংস্কৃত ভাষায় ছন্দ শব্দের একটা অর্থ হচ্ছে কাব্যের মাত্রা, আর-একটা অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা । মাত্রা আকারে কবির স্বাক্ট-ইচ্ছা কাব্যকে বিচিত্র রূপ দিতে থাকে। বিশ্বস্বাক্টর বৈচিত্র্যও দেশকালের মাত্রা-অনুসারে । কালের বা দেশের মাত্রা বদল করবামাত্রই স্বাক্টর রূপ এবং ভাব বদল হয়ে যায়। এই বিশ্বছন্দের মাত্রাকে আমরা আরো গভীর করে দেখতে পারি ; তা হলে চরম বিশ্বকবির ইচ্ছাশক্তির মধ্যে গিয়ে পৌছতে হবে । মাত্রা সেখানে মাত্রার অতীতের মধ্যে ; সীমার বৈচিত্র্য সেখানে অসীমের লীলা অর্থে প্রকাশ পায় । দেশকালের মধ্যেই দেশকালের অতীতকে উপলব্ধি করে তবেই আমরা বলতে পারি ‘মরি-মরি” । সেই আনন্দ না হলে মরা সহজ হবে কেমন করে । তাল আর সা-রে-গ-ম যখন কেবলমাত্র বাহিরের তথ্যরূপে কানের উপর মনের উপর পড়তে থাকে তখন তার থেকে মুক্তি পাবার জন্তে চিত্ত ব্যাকুল হয়ে ওঠে, কিন্তু যখন সেই তাল আর সা-রে-গ-মের ভিতর থেকেই সংগীতকে দেখতে পাই তখন মাত্রায় অমাত্রকে, সীমায় অসীমকে, পাওয়ায় অপাওয়াকে জানি ; তখন সেই আনন্দে মনে হয় এর জন্তে সব দিতে পারি। কার জন্যে। ঐ সা-রে-গ-মের জন্যে ? ওই বীপতাল-চোঁতালের জন্তে, জুন-চৌদুনের কসরতের জন্তে ? না ; এমন-কিছুর জন্তে যা অনির্বচনীয়, যা পাওয়া না-পাওয়ায় এক হয়ে মেশা ; যা স্বর নয়, তাল নয়, স্বরতালে ব্যাপ্ত হয়ে থেকে স্বরতালের অতীত যা, সেই সংগীত । 姆· প্রয়োজনের জানা নিতান্তই জানার সীমানার মধ্যে বদ্ধ, তার চার দিকে না-জানার আকাশমণ্ডলটা চাপা ; সেইজন্তে তাকে সত্যরূপে দেখা হয় না, সেইজন্তে তার মধ্যে যথার্থ আনন্দ নেই, বিস্ময় নেই, শ্রদ্ধা নেই। সেইজন্তে তার উদ্দেশ্যে যথার্থ ত্যাগ স্বীকার সম্ভব হতে পারে না । এই কারণেই ভারতবর্ষের প্রতি ইংরেজের ব্যক্তিগত বদান্ততার অদ্ভূত অভাব। অথচ, এ সম্বন্ধে তার সংগতির বোধ এতই অল্প যে, ভারতবর্ষের জন্তে তার ত্যাগের তালিকা হিসাব করবার বেলায় সর্বদাই সে অহংকার করে বলে যে, তার সিভিল সাভিস, তার ফৌজের দল ভারতবর্ষের সেবায় গরমে দগ্ধ হয়ে, লিভার বিকৃত করে, প্রবাসের দুঃখ মাথায় নিয়ে কী কষ্টই না পাচ্ছে। বিষয়কর্মের আনুষঙ্গিক দুঃখকে