পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ঊনবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२८ cज८ैशव्र $२२8 মানুষ যে মানুষের পক্ষে কত স্বরের জীব তা যুরোপে আমেরিকায় গেলে বুঝতে পারা যায়। সেখানকার সমাজ হচ্ছে দ্বীপশ্রেণী— ছোটো এক এক দল জ্ঞাতির চারি দিকে বৃহৎ অজ্ঞাতির লবণসমূদ্র ; পরস্পরসংলগ্ন মহাদেশের মতো নয়। জ্ঞাতি শব্দটা তার ধাতুগত বিশেষ অর্থে আমি ব্যবহার করছি ; অর্থাৎ, ষে-কয়জনের মধ্যে জানাশোনা আছে, আনাগোনা চলে ; আমাদের দেশে পরম্পর আনাগোনার জন্ত জানাশোনার দরকার হয় না। আমরা তো খোলা জায়গায় রাস্তার চৌমাথায় বাস করি। একে আমাদের আয়ু কম, তার উপরে অবাধ সামাজিকতায় পরস্পরের সময় নষ্ট ও কাজ নষ্ট করতে আমাদের সংকোচমাত্র নেই। আবার অন্তপক্ষে, ভোগের আদর্শ যেখানে অত্যন্ত বেশি ব্যয়সাধ্য, সুতরাং যেখানে সময়-জিনিসটাকে মানুষ টাকার দরে যাচাই করতে বাধ্য, সেখানে মামুষে মামুষে মিল কেবলই বাধাগ্রস্ত হবেই, আর সেই মিল যতই প্রতিহত ও অনভ্যস্ত হতে থাকবে ততই মানুষের সর্বনাশের দিন ঘনিয়ে আসবেই। একদিন দেখা যাবে, মানুষ বিস্তর জিনিস সংগ্রহ করেছে, বিস্তর বই লিখেছে, বিস্তর দেয়াল ঘেঁথে তুলেছে, কেবল নিজে গেছে হারিয়ে। মানুষ আর মানুষের কীতির মধ্যে সামঞ্জস্য ভেঙে গিয়েছে বলেই আজ মানুষ খুব সমারোহ করে আপন গোরস্থান তৈরি করতে বসেছে। ২৬ সেপ্টেম্বর একজন আধুনিক জাপানি রূপদক্ষের রচিত একটি ছবি আমার কাছে আছে। সেটি যতবার দেখি আমার গভীর বিস্ময় লাগে । দিগস্তে রক্তবর্ণ স্বৰ্ষ— শীতের বরফচাপা শাসন সবে-মাত্র ভেঙে গেছে, প্লাম গাছের পত্রহীন শাখাগুলি জয়ধ্বনির বাহভঙ্গীর মতো স্বর্ষের দিকে প্রসারিত, সাদা সাদা ফুলের মঞ্জরীতে গাছ ভরা। সেই প্লাম গাছের তলায় একটি অন্ধ দাড়িয়ে তার আলোকপিপাস্থ দুই চক্ষু স্বর্ষের দিকে তুলে প্রার্থনা করছে। আমাদের ঋষি প্রার্থনা করেছেন : তমসো মা জ্যোতিৰ্গময়, অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যাও। চৈতন্তের পরিপূর্ণতাকে তারা জ্যোতি বলেছেন। তাদের ধ্যানমস্ত্রে স্বর্ধকে তারা বলেছেন : ধিয়োয়োন প্রচোয়াৎ, আমাদের চিত্তে তিনি ধীশক্তির ধারাগুলি প্রেরণ করছেন ।