পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ২১৫ জানতেম, হীনবর্ণের পরে জনিল শ্রদ্ধাপূর্ণ কক্ষপ প্রকাশ করে থাকে। আমি তাকে বললেন, “পূর্বপুরুষের কলম্ব জন্মের দ্বারাই ৰালিত হয়ে যায়, এ তো তোমরা অমিয়ার জীবনেই স্পষ্ট দেখতে পােচ্ছ। সে পদ্ম, তাতে পঙ্কের চিহ্ন নেই।” নববঙ্গে ভাইফোটার সভা তার পরে আর জমল না। ফোটা রয়েছে তৈরি, কপাল মেরেছে দৌড়। আর শুনেছি, অনিল কলকাতা ছেড়ে কুমিল্লায় স্বরাজ প্রচারের কী-একটা কাজ নিয়েছে। 聽 অমিয়া কলেজে ভরতি হবার উদ্যোগে অাছে। ইতিমধ্যে পিসিমা তীর্থ থেকে ফিরে আসার পর শুশ্ৰুষার সাত-পাক বেড়ি থেকে জামার পা দুটো খালাস পেয়েছে। অগ্রহায়ণ, ১৩৩২ সংস্কার চিত্রগুপ্ত এমন অনেক পাপের হিসাৰ বড়ো অক্ষরে তার খাতায় জমা করেন যা থাকে পাপীর নিজের অগোচরে । তেমনি এমন পাপও ঘটে যাকে আমিই চিনি পাপ বলে, আর-কেউ না । যেটার কথা লিখতে বসেছি সেটা সেই জাতের। চিত্রগুপ্তের কাছে জবাবদিহি করবার পূর্বে আগে-ভাগে কবুল করলে অপরাধের মাত্রাট হালকা হবে। ব্যাপারটা ঘটেছিল কাল শনিবার দিনে। সেদিন আমাদের পাড়ায় জৈনদের মহলে কী একটা পরব ছিল। আমার স্ত্রী কলিকাকে নিয়ে মোটরে করে বেরিয়েছিলুম —চায়ের নিমন্ত্রণ ছিল বন্ধু নয়নমোহনের বাড়িতে। স্ত্রীর কলিকা নামটি শ্বশুর-দত্ত, আমি ওর জন্য দায়ী নই। নামের উপযুক্ত র্তার স্বভাব নয়, মতামত খুবই পরিস্ফুট। বড়োবাজারে বিলিতি কাপড়ের বিপক্ষে যখন পিকেট করতে বেরিয়েছিলেন, তখন দলের লোক ভক্তি করে তার নাম দিয়েছিল এবত্রতা। অামার নাম গিরীন্দ্র । দলের লোক অামাকে জামার পত্নীর পতি বলেই জানে, স্বনামের সার্থকতার প্রতি লক্ষ্য করে না । বিধাতার কৃপায় পৈতৃক উপার্জনের গুণে আমারও কিঞ্চিং সার্থকতা আছে। তার প্রতি দলের লোকের দৃষ্টি পড়ে চাদআদায়ের সময় । স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর স্বভাবের অমিল থাকলেই মিল ভালো হয়, শুকনো মাটির সঙ্গে জলধারার মতো। আমার প্রকৃতি অত্যন্ত টিলে, কিছুই বেশি করে চেপে ধরি নে। জাষার স্ত্রীর প্রকৃতি অত্যন্ত অঁাট, যা ধরেন তা কিছুতেই ছাড়েন না। আমাদের এই বৈষম্যের গুণেই সংসারে শাস্তিরক্ষা হয় ।