পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8:ఆ রবীন্দ্র-রচনাবলী শশাঙ্ক বুঝে নিয়েছে এই অর্বাচীনকে উপরের আসনে বসিয়ে নীচের স্তরে থেকে তাকেই কাজ চালিয়ে নিতে হবে। কর্তৃপক্ষ পিঠে চাপড় মেরে বললে, “ভেরি সরি মজুমদার, তোমাকে যত শীঘ্ৰ পারি উপযুক্ত স্থান জুটিয়ে দেব।” এরা দুজনেই এক ফ্রামেসন লজের অন্তভুক্ত। তবু আশ্বাস ও সান্থনা সত্ত্বেও সমস্ত ব্যাপারটা মজুমদারের পক্ষে অত্যন্ত বিস্বাদ হয়ে উঠল । ঘরে এসে ছোটোখাটো সব বিষয়ে খিটখিট শুরু করে দিলে। হঠাৎ চোখে পড়ল তার আপিসম্বরের এককোণে ঝুল, হঠাৎ মনে হল চৌকির উপরে যে সবুজ রঙের ঢাকাটা আছে সে-রঙটা ও দু-চক্ষে দেখতে পারে না। বেহার বারান্দ ঝাড় দিচ্ছিল, ধুলো উড়ছে বলে তাকে দিল একটা প্রকাও ধমক। অনিবাৰ্য খুলে রোজই ওড়ে কিন্তু ধমকটা সদ্য নূতন। অসম্মানের খবরটা স্ত্রীকে জানালে না। ভাবলে যদি কানে ওঠে তা হলে চাকরির জালটাতে আরো একটা গ্রন্থি পাকিয়ে তুলবে—হয়তো বা স্বয়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝগড়া করে আসবে অমধুর ভাষায় । বিশেষত ঐ ডোনাল্ডসনের উপর তার রাগ আছে। একবার সে সাকিট-হাউসের বাগানে বঁাদরের উৎপাত দমন করতে গিয়ে ছররা-গুলিতে শশাঙ্কর সোলার টুপি ফুটাে করে দিয়েছে। বিপদ ঘটে নি কিন্তু ঘটতে তো পারত। লোকে বলে দোষ শশাঙ্করই, শুনে তার রাগ আরো বেড়ে ওঠে ডোনল্ডসনের পরেই। সকলের চেয়ে রাগের কারণটা এই, বঁাদরকে লক্ষ্য-করা গুলি শশাঙ্কের উপর পড়াতে শত্রুপক্ষ এই দুটো ব্যাপারের সমীকরণ করে উচ্চহাস্ত করেছে। শশাঙ্কের পদলাঘবের খবরটা শশাঙ্কের স্ত্রী স্বয়ং আবিষ্কার করলে । স্বামীর রকম দেখেই বুঝেছিল সংসারে কোনো দিক থেকে একটা কাটা উচিয়ে উঠেছে। তার পরে কারণ বের করতে সময় লাগে নি। কনষ্টিটু্যুশনাল অ্যাজিটেশনের পথে গেল না, গেল সেলফ-ডিটামিনেশনের অভিমুখে । স্বামীকে বললে, “আর নয়, এখনই কাজ ছেড়ে দাও।” দিতে পারলে অপমানের জোকটা বুকের কাছ থেকে খসে পড়ে। কিন্তু ধ্যানদৃষ্টির সামনে প্রসারিত রয়েছে বাধা মাইনের অন্নক্ষেত্র, এবং তার পশ্চিমদিগন্তে পেনসনের অবিচলিত স্বর্ণোজ্জল রেখা । | শশাঙ্কমৌলী যে-বছরে এম. এসসি. ডিগ্রির সর্বোচ্চ শিখরে সদ্য অধিরূঢ়, সেই বছরেই তার শ্বশুর শুভকর্মে বিলম্ব করেন নি— শশাঙ্কের বিবাহ হয়ে গেল শমিলার সঙ্গে । ধনী শ্বশুরের সাহায্যেই এঞ্জিনিয়ারিং পাস করলে। তার পরে চাকরিতে দ্রুত উন্নতির লক্ষণ দেখে রাজারামবাবু জামাতার ভাবী সচ্ছলতার ক্রমবিকাশ নির্ণয় করে আশ্বস্ত হয়েছিলেন। মেয়েটিও আজ পর্যন্ত অনুভব করে নি তার অবস্থাস্তর ঘটেছে। শুধু ৰে