পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন । voyo ব্ৰহ্মকে পাওয়া বলতে যদি একটা কোনো চিন্তায় মনকে বসানে যা একটা কোনো ভাবে মনকে রলিয়ে তোলা হত তাহলে কোনো কথাই ছিল না—কিন্তু ব্ৰহ্মকে পাওয়া তো আমন একটি ছোটো ব্যাপার নয়। তার জন্তে শিক্ষা হল কই ? তার জন্তে সমস্ত চিত্তকে একমনে নিযুক্ত করলুম কই ? তপসা ব্ৰহ্ম বিজিজ্ঞাসম্ব। অর্থাৎ তপস্তার দ্বারা ব্ৰহ্মকে বিশেষরূপে জানতে চাও, এই যে উপদেশ সে-উপদেশের মতো তপস্যা হল कहे । কেবল কি নিয়মিত সময়ে তার নাম করা নাম শোনাই তপতা ? জীবনের জয় একটু উদৃত্ত জায়গা তার জন্তে ছেড়ে দেওয়াই কি তপস্তা ? সেইটুকুমাত্র ছেড়ে দিয়েই তুমি রোজ তার হিসেব নিকেশ করে নেবার তাগাদ কর । বল যে, এই তো উপাসন করছি কিন্তু ব্ৰহ্মকে পাচ্ছি নে কেন ? এত সস্তায় কোন জিনিসটা পেয়েছ ? কেবল পাচজন মানুষের সঙ্গে মিলে থাকবার উপযুক্ত হবার জন্তে কী তপতাই না করতে হয়েছে ? বাপ মার কাছে শিক্ষা, প্রতিবেশীর কাছে শিক্ষা, বন্ধুর কাছে শিক্ষা, শক্রর কাছে শিক্ষা, ইস্কুলে শিক্ষা, আপিলে শিক্ষণ ; রাজার শাসন, সমাজের শাসন, শাস্ত্রের শাসন । সেজন্ত ক্রমাগতই প্রবৃত্তিকে দমন করতে হয়েছে, ব্যবহারকে সংৰত করতে হয়েছে, ইচ্ছাবৃত্তিকে পরিমিত করতে হয়েছে। এত করেও পরিপূর্ণ সামাজিক জীব হয়ে উঠি নি,—কত অসতর্কতা কত শৈথিল্যবশত কত অপরাধ করি তার ঠিক নেই। তাই জীবনের শেষদিন পর্বস্ত আমাদের সমাজসাধনা চলেইছে । সমাজবিহারের জন্ত যদি এত কঠিন ও নিরস্তর সাধনা তবে ব্রহ্মবিহারের জন্ত বুঝি কেবল মাঝে মাঝে নিয়মমত দুই চারিটি কথা শুনে বা দুই চারিটি কথা বলেই কাজ হয়ে যাবে । এরকম আশা দি কেউ করে তবে বোঝা যাবে সে-ব্যক্তি মুখে বাই বলুক, সাধনার লক্ষ্য যেখানে সে স্থাপন করেছে সেটা একটা ছোটো জায়গা । সে জায়গায় এমন কিছুই নেই যা তোমার সমস্ত সংসারের চেয়েও বড়ো—বরং এমন কিছু আছে যার চেয়ে তোমার সংসারের অধিকাংশ জিনিসই বড়ো । এইটি মনে রাখতে হবে প্রতিদিন সকল কর্মের মধ্যে আমাদের সাধনাকে জাগিয়ে রাখতে হবে । এই সাধনাটিকে আমাদের গড়তে হবে । শরীরটিকে মনটিকে হৃদয়টিকে সকল দিক দিয়ে ব্রহ্মবিহারের অমুকুল করে তুলতে হবে। J সমাজের জন্য আমাদের এই শরীর মন হৃদয়কে আমরা তে একটু একটু করে গড়ে তুলেছি। শরীরকে সমাজের উপযোগী সাজ করতে অভ্যাস করিয়েছি—শরীর সমাজের উপযোগী লজ্জাসংকোচ করতে শিখেছে । তার হাত পা চাহনি হাসি সমাজের প্রয়োজন