পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sso - রবীন্দ্র-রচনাবলী শমিলা জানে পাকশালা থেকে তার সহোদরার অন্তৰ্ধানে আহার্যের উৎকর্ষ-সাধনে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না, তবু স্নিগ্ধ হৃদয়ের ষত্বটুকু শশাঙ্কের আরামকে অলংকৃত করে। কিন্তু আরামের কথা তুলে কী হবে যখন প্রতিদিনই স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে আরামটা সামান্ত হয়ে গেছে, স্বামী হয়েছে খুশি । এই দিক থেকে শমিলার মনে এল অশাস্তি। রোগশয্যায় এ-পাশ ও-পাশ ফিরতে ফিরতে নিজেকে বার বার করে বলছে, 'মরবার আগে ঐ কথাটুকু বুঝে গেলুম। আর সবই করেছি, কেবল খুশি করতে পারি নি। ভেবেছিলুম উমিমালার মধ্যে নিজেকেই দেখতে পাব, কিন্তু ও তো আমি নয়, ও যে সম্পূর্ণ আর-এক মেয়ে। জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবে, ‘আমার জায়গা ও নেয় নি, ওর জায়গা আমি নিতে পারব না। আমি চলে গেলে ক্ষতি হবে, কিন্তু ও চলে গেলে সব শূন্ত হবে।’ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ে গেল, শীতের দিন আসছে, গরম কাপড়গুলো রোদুরে দেওয়া চাই। উমি তখন শশাঙ্কের সঙ্গে পিংপং খেলছিল, ডেকে পাঠালে। বললে, “উর্মি, এই নে চাবি। গরম কাপড়গুলো ছাদের উপর রোদে মেলে দে গে।” উমি আলমারিতে চাবি সবেমাত্র লাগিয়েছে এমন সময় শশাঙ্ক এসে বললে, “ও-সব পরে হবে, ঢের সময় অাছে। খেলাটা শেষ করে যাও।” "किङ्खु দিদি—” *আচ্ছা, দিদির কাছে ছুটি নিয়ে আসছি।” দিদি ছুটি দিলে, সেইসঙ্গে বড়ো একটা দীর্ঘনিশ্বাস পড়ল। দাসীকে ডেকে বললে, “দে তো আমার মাথায় ঠাও। জলের পটি ” ঘদিও অনেক দিন পরে হঠাৎ উর্মি ছাড়া পেয়ে ধেন আত্মবিশ্বত হয়ে গিয়েছিল, তৰু সহসা এক-এক দিন মনে পড়ত ওর জীবনের কঠিন দায়িত্ব । ও তো স্বাধীন নয়, ও যে বাধা ওর ব্রতের সঙ্গে। তারই সঙ্গে মিলিয়ে ষে বাধন ওকে ব্যক্তিবিশেষের সঙ্গে বেঁধেছে তার অনুশাসন আছে ওর পরে। ওর দৈনিক কর্তব্যের খুটিনাটি সেই তো স্থির করে দিয়েছে। ওর জীবনের পরে তার চিরকালের অধিকার, এ কথা উমি কোনোমতে অস্বীকার করতে পারে না । যখন নীরদ উপস্থিত ছিল স্বীকার করা সহজ ছিল, জোর পেত মনে। এখন ওর ইচ্ছে একেবারেই বিমুখ হয়ে গেছে, অথচ কর্তব্যবুদ্ধি তাড়া দিচ্ছে। কর্তব্যবুদ্ধির অত্যাচারেই মন আরো যাচ্ছে বিগড়িয়ে । নিজের অপরাধ ক্ষমা