পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՅՊԵ রবীন্দ্র রচনাবলী বা নিকটে আছে বলে বড়ো এবং দূরে আছে বলে ছোটে, যা বাইরে আছে বলেই প্রত্যক্ষ এবং ভিতরে আছে বলেই প্রচ্ছন্ন, যা বিচ্ছিন্ন করে দেখলে নিরর্থক, সংযুক্ত করে দেখলেই সার্থক তাকে তার যাথার্থ্য রক্ষা করে দেখবার শিক্ষা দিতে হয়। বোধের তপস্তার বাধা হচ্ছে রিপুর বাধা ; প্রবৃত্তি অসংঘত হয়ে উঠলে চিত্তের সাম্য থাকে না স্বতরাং বোধ বিকৃত হয়ে যায়। কামনার জিনিসকে আমরা শ্রেয় দেখি, সে জিনিসটা সত্যই শ্রেয় বলে নয় আমাদের কামনা আছে বলেই ; লোভের জিনিসকে আমরা বড়ো দেখি, সে জিনিসটা সত্যই বড়ো বলে নয় আমাদের লোভ আছে বলেই । এই জন্যে ব্রহ্মচর্যের সংযমের দ্বারা বোধশক্তিকে বাধামুক্ত করবার শিক্ষা দেওয়া আবশ্বক। ভোগবিলাসের আকর্ষণ থেকে অভ্যাসকে মুক্তি দিতে হয়, যে সমস্ত সাময়িক উত্তেজন লোকের চিত্তকে ক্ষুব্ধ এবং বিচারবুদ্ধিকে সামঞ্জস্তভ্রষ্ট করে দেয় তার ধাক্কা থেকে বাচিয়ে বুদ্ধিকে সরল করে বাড়তে দিতে হয় । যেখানে সাধনা চলছে, যেখানে জীবনযাত্রা সরল ও নির্মল, যেখানে সামাজিক সংস্কারের সংকীর্ণতা নেই, যেখানে ব্যক্তিগত ও জাতিগত বিরোধবুদ্ধিকে দমন করবার চেষ্টা আছে, সেইখানেই ভারতবর্ষ ষাকে বিশেষভাবে বিস্তা বলেছে তাই লাভ করবার স্থান । আমি জানি অনেকেই বলে উঠবেন এ একটা ভাবুকতার উচ্ছ্বাস, কাগুজ্ঞানবিহীনের দুরাশামাত্র । কিন্তু সে আমি কোনোমতেই স্বীকার করতে পারি নে। যা সত্য তা যদি অসাধ্য হয় তবে তা সত্যই নয়। অবশু, যা সকলের চেয়ে শ্রেয় তাই যে সকলের চেয়ে সহজ তা নয়, সেই জন্তেই তার সাধন চাই । আসলে, প্রথম শক্ত হচ্ছে সত্যের প্রতি শ্রদ্ধ করা। টাকা জিনিসটার দরকার আছে এই বিশ্বাস যখন ঠিক মনে জন্মায় তখন এ আপত্তি আমরা আর করি নে ষে টাকা উপার্জন করা শক্ত । তেমনি ভারতবর্ষ যখন বিদ্যাকেই নিশ্চয়রূপে শ্রদ্ধা করেছিল তখন সেই বিদ্যালাভের সাধনাকে অসাধ্য বলে হেসে উড়িয়ে দেয় নি। তখন তপস্যা আপনি সত্য হয়ে উঠেছিল। অতএব প্রথমত দেশের সেই সত্যের প্রতি দেশের লোকের শ্রদ্ধা যদি জন্মে। তবে দুৰ্গম বাধার মধ্য দিয়েও তার পথ আপনিই তৈরি হয়ে উঠবে। বর্তমানকালে এখনই দেশে এই রকম তপস্তার স্থান । এই রকম বিদ্যালয় ষে অনেকগুলি হবে আমি এমনতরো আশা করি নে। কিন্তু আমরা যখন বিশেষভাবে জাতীয় বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করবার জন্তে সম্প্রতি জাগ্রত হয়ে উঠেছি তখন ভারতবর্ষের