পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালাস্তুর ONA পুতুলগুলো নিয়ে খেলা করা আর তাদের সাজবে না। তাদের স্বাভাবিক জীবপালিনী বুদ্ধি, কেবল ঘরের লোককে নয়, সকল লোককে রক্ষার জন্তে কায়মনে প্রবৃত্ত হবে । আদিকাল থেকে পুরুষ আপন সভ্যতাদুর্গের ইটগুলো তৈরি করেছে নিরস্তর নরবলির রক্তে— তারা নির্মমভাবে কেবলই ব্যক্তিবিশেষকে মেরেছে কোনো একটা সাধারণ নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে ; ধনিকের ধন উৎপন্ন হয়েছে শ্রমিকের প্রাণ শোষণ করে ; প্রতাপশালীর প্রতাপের আগুন জালানো রয়েছে অসংখ্য দুর্বলের রক্তের আহুতি দিয়ে ; রাষ্ট্রস্বার্থের রথ চালিয়েছে প্রজাদের তাতে রজ্জ্ববদ্ধ করে। এ সভ্যতা ক্ষমতার দ্বারা চালিত, এতে মমতার স্থান অল্প। শিকারের আমোদকে জয়যুক্ত করে এ সভ্যতা বধ করে এসেছে অসংখ্য নিরীহ নিরুপায় প্রাণী ; এ সভ্যতায় জীবজগতে মানুষকে সকলের চেয়ে নিদারুণ করে তুলেছে মানুষের পক্ষে এবং অন্ত জীবের পক্ষে। বাঘের ভয়ে বাঘ উদবিগ্ন হয় না,কিন্তু এ সভ্যতায় পৃথিবী জুড়ে মানুষের ভয়ে মানুষ কম্পান্বিত । এইরকম অস্বাভাবিক অবস্থাতেই সভ্যতা আপন মুষল আপনি প্রসব করতে থাকে। আজ তাই শুরু হল । সঙ্গে সঙ্গে ভীত মানুষ শাস্তির কল বানাবার চেষ্টায় প্রবৃত্ত, কিন্তু কলের শান্তি তাদের কাজে লাগবে না শান্তির উপায় যাদের অস্তরে নেই। ব্যক্তিহননকারী সভ্যতা টিকতে পারে না । সভ্যতাস্বাক্টর নূতন কল্প আশা করা যাক। এ আশা যদি রূপ ধারণ করে তবে এবারকার এই স্বষ্টিতে মেয়েদের কাজ পূর্ণ পরিমাণে নিযুক্ত হবে সন্দেহ নেই। নবযুগের এই আহবান আমাদের মেয়েদের মনে যদি পৌছে থাকে তবে তাদের রক্ষণশীল মন যেন বহু যুগের অস্বাস্থ্যকর আবর্জনাকে একান্ত আসক্তির সঙ্গে বুকে চেপে না ধরে। র্তারা যেন মুক্ত করেন হৃদয়কে, উজ্জল করেন বুদ্ধিকে, নিষ্ঠা প্রয়োগ করেন জ্ঞানের তপস্যায়। মনে রাখেন, নির্বিচার অন্ধরক্ষণশীলতা স্বষ্টিশীলতার বিরোধী। সামনে আসছে নূতন স্বাক্টর যুগ । সেই যুগের অধিকার লাভ করতে হলে মোহমুক্ত মনকে সর্বতোভাবে শ্রদ্ধার যোগ্য করতে হবে, অজ্ঞানের জড়তা এবং সকলপ্রকার কাল্পনিক ও বাস্তবিক ভয়ের নিম্নগামী আকর্ষণ থেকে টেনে আপনাকে উপরের দিকে তুলতে হবে। ফললাভের কথা পরে আসবে— এমন-কি, না আসতেও পারে— কিন্তু যোগ্যতা লাভের কথা সর্বাগ্রে । শাস্তিনিকেতন । ২ অক্টোবর ১৯৩৬ 〉S)8○ كليصة