পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ " . ుల বোঝে হালকা সাদা রঙের শাড়িতে সকল রঙেরই ইশারা খাটে সহজে । ও সেই কাপড়ে নূতনত্ব দেয় নানা আভাসে, মনে হয় না সেজেছে । ও বোঝে, আমার অবচেতন মনের দিগন্ত উদ্ভাসিত হয় ওর সাজে— আমি খুশি হই, জানি নে কেন খুশি হয়েছি । * i t . . . . প্রত্যেক মাহুবেই আছে একজন আমি, সেই অপরিমেয় রহস্তের অসীম মূল্য জোগায় ভালোবাসায়। অহংকারের মেকি পয়সা তুচ্ছ হয়ে যায় এর কাছে। স্বনেত্র আপন মনপ্রাপ্ত থিয় এই পরম মূল্য দিয়ে এসেছে আমাকে, আজ একুশ বছর ধরে। ওর শুভ্রললন্ট 'কুছুমবিন্দুর মধ্যে প্রতিদিন লেখা হয় অক্ষান্ত বিস্ময়ের বাণী । ওর নিখিল জগতের মর্মস্থান অধিকার করে আছি আমি, সেজন্তে আমাকে আর-কিছু হতে হয় নি সাধারণ জগতের যে-কেউ হওয়া ছাড়া। সাধারণকেই অসাধারণ ক’রে আবিষ্কার করে ভালোবাসা । শাস্ত্রে বলে, আপনাকে জানো। আনন্দে আপনাকেই জানি, আর-একজন যখন প্রেমে জেনেছে আমার আপনকে । & বাবা ছিলেন কোনো নামজাদা ব্যাঙ্কের অন্যতম অধিনায়ক, তারই একজন অংশিদার হলেম আমি। ষাকে বলে ঘুমিয়ে-পড়া অংশিদার একেবারেই তা নয়। আষ্ট্রেপৃষ্ঠে লাগাম দিয়ে জুতে দিলে আমাকে আপিসের কাজে । আমার শরীরমনের সঙ্গে এই কাজটা মানানসই নয়। ইচ্ছা ছিল, ফরেস্ট বিভাগে কোথাও পরিদর্শকের পদ দখল করে বসি, খোলা হাওয়ায় দৌড়ধাপ করি, শিকারের শখ নিই মিটিয়ে । বাবা তাকালেন প্রতিপত্তির দিকে ; বললেন, যে-কাজ পাচ্ছ সেটা সহজে জোটে না বাঙালির ভাগ্যে । হার মানতে হল। তা ছাড়া মনে হয়, পুরুষের প্রতিপত্তি জিনিসটা মেয়েদের কাছে দামী । স্বনেত্রার ভগ্নীপতি অধ্যাপক ; ইস্পীরিএল সার্ভিস তার, সেটাতে ওদের মেয়েমহলের মাথা উপরে তুলে রাখে। যদি জংলি নিস্পেকেট্রর সাহেব হয়ে সোলার হাট পরে বাঘ-ভালুকের চামড়ায় মেঝে দিতুম ঢেকে, তাতে অামার দেহের গুরুত্ব কমিয়ে রাখত, সেই সঙ্গে কমাত আমার পদের গৌরব আরপাচজন পদস্থ প্রতিবেশীর তুলনায়। কী জানি, এই লাঘবতায় মেয়েদের আত্মাভিমান বুঝি কিছু ক্ষুন্ন করে। এ দিকে ডেস্কে-বাধা স্থাবরত্বের চাপে দেখতে দেখতে আমার যৌবনের ধার আসছে ভেঁাতা হয়ে। অন্ত-কোনো পুরুষ হলে সে কথাটা নিশ্চিন্ত মনে ভুলে গিয়ে পেটের পরিধিবিস্তারকে দুর্বিপাক বলে গণ্য করত না। আমি তা পারি নে। আমি