পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6 օԵր ब्रचौञ्ज-ब्रफ़नांबलौ এর থেকেই দেখা যাচ্ছে পরমাত্মার যোগে সকলের সঙ্গেই যোগ উপলব্ধি করা, সকলের মধ্যেই প্রবেশ লাভ করা, এইটেকেই ভারতবর্ষ মকুন্তত্বের চরম সার্থকতা বলে গণ্য করেছিল। ধনী হয়ে, প্রবল হয়ে, নিজের স্বাতন্ত্র্যকেই চারিদিকের সকলের চেয়ে উচ্চে খাড়া করে তোলাকেই ভারতবর্ষ সকলের চেয়ে গৌরবের বিষয় বলে মনে করে নি । মানুষ বিনাশ করতে পারে, কেড়ে নিতে পারে, অর্জন করতে পারে, সঞ্চয় করতে পারে, আবিষ্কার করতে পারে, কিন্তু এই জন্যেই যে মাহুষ বড়ো তা নয়। মানুষের মহত্ত্ব হচ্ছে মানুষ সকলকেই আপন করতে পারে। মানুষের জ্ঞান সব জায়গায় পৌছোয় না, তার শক্তি সব জায়গায় নাগাল পায় না, কেবল তার আত্মার অধিকারের সীমা নেই। মানুষের মধ্যে যারা শ্রেষ্ঠ তারা পরিপূর্ণ বোধশক্তির দ্বারা এই কথা বলতে পেরেছেন যে, ছোট হ’ক বড়ো হ’ক, উচ্চ হ’ক নীচ হ’ক, শক্ৰ হ’ক মিত্ৰ হ’ক সকলেই আমার আপন । মানুষের মধ্যে র্যারা শ্রেষ্ঠ তারা এমন জায়গায় সকলের সঙ্গে সমান হয়ে দাড়ান যেখানে সর্বব্যাপীর সঙ্গে তাদের আত্মার যোগস্থাপন হয়। যেখানে মানুষ সকলকে ঠেলেঠলে নিজে বড়ো হয়ে উঠতে চায় সেখানেই তার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। সেই জন্যেই যারা মানবজন্মের সফলতা লাভ করেছেন উপনিষং তাদের ধীর বলেছেন, যুক্তাত্মা বলেছেন। অর্থাং তারা সকলের সঙ্গে মিলে আছেন বলেই শান্ত, তারা সকলের সঙ্গে মিলে আছেন বলেই সেই পরম একের সঙ্গে তাদের বিচ্ছেদ নেই, তারা যুক্তাত্মা । খ্ৰীস্টের উপদেশ-বাণীর মধ্যেও এই কথাটির আভাস আছে । তিনি বলেছেন সুচির ছিদ্রের ভিতর দিয়ে যেমন উট প্রবেশ করতে পারে না, ধনীর পক্ষে মুক্তিলাভও তেমনি দুঃসাধ্য। তার মানে হচ্ছে এই যে, ধন বল, মান বল যা কিছু আমরা জমিয়ে তুলি তার দ্বারা আমরা স্বতন্ত্র হয়ে উঠি, তার দ্বারা সকলের সঙ্গে আমাদের যোগ নষ্ট হয়। তাকেই বিশেষভাবে আগলাতে সামলাতে গিয়ে সকলকে দূরে ঠেকিয়ে রাখি। সঞ্চয় যতই বাড়তে থাকে ততই সকলের চেয়ে নিজেকে স্বতন্ত্র বলে গর্ব হয় । সেই গর্বের টানে এই স্বাতন্ত্র্যকে কেবলই বাড়িয়ে নিয়ে চলতে চেষ্টা হয় । এর আর সীমা নেই— আরও বড়ো, আরও বড়ো, আরও বেশি, আরও বেশি । এমনি করে মানুষ সকলের সঙ্গে যোগ হারাবার দিকেই চলতে থাকে, তার সর্বত্র প্রবেশের অধিকার কেবল নষ্ট হয়। উট যেমন স্থচির ছিত্রের মধ্যে দিয়ে গলতে পারে না সেও তেমনি কেবলই স্কুল হয়ে উঠে নিখিলের কোনো পথ দিয়েই গলতে পারে না, সে আপনার বড়োত্বের মধ্যেই