পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

이 সত্যকে দেখা আমাদের ধ্যানের দ্বারা স্বষ্টিকর্তাকে তার স্বষ্টির মাঝখানে ধ্যান করি। ভূভূর্ব স্বঃ র্তা হতেই স্বষ্টি হচ্ছে, স্বর্ধচন্দ্র গ্ৰহতারা প্রতিমুহূর্তেই তার থেকে প্রকাশ হচ্ছে, আমাদের চৈতন্ত প্রতিমুহূর্তেই তার থেকে প্রেরিত হচ্ছে, তিনিই অবিরত সমস্ত প্রকাশ করছেন, এই হচ্ছে আমাদের ধ্যান । এই দেখাকেই বলে সত্যকে দেখা। আমরা সমস্ত ঘটনাকে কেবল বাহঘটন বলেই দেখি । তাতে আমাদের কোনো আনন্দ নেই। সে আমাদের কাছে পুরাতন হয়ে যায়, সে আমাদের কাছে দম-দেওয়া কলের মতো আকার ধারণ করে ; এইজন্তে পাথরের কুড়ির উপর দিয়ে যেমন স্রোত চলে যায় সেই রকম করে জগৎস্রোত আমাদের মনের উপর দিয়ে অবিশ্রাম বয়ে যাচ্ছে। চিত্ত তাতে সাড়া দিচ্ছে না, চারিদিকের দৃশুগুলো তুচ্ছ এবং দিনগুলো অকিঞ্চিংকর হয়ে দেখা দিচ্ছে। সেইজতে কৃত্রিম উত্তেজনা এবং নানা বৃথা কর্ম স্বষ্টিদ্বারা আমরা চেতনাকে জাগিয়ে রেখে তবে আমোদ পাই । যখন কেবল ঘটনার দিকে তাকিয়ে থাকি তখন এই রকমই হয় । সে আমাদের রস দেয় না, খাদ্য দেয় না। সে কেবল আমাদের ইন্দ্রিয়কে মনকে হৃদয়কে কিছু দূর পর্যন্ত অধিকার করে, শেষ পর্যন্ত পৌছোয় না। এইজন্তে তার ঘেটুকু রস আছে তা উপরের থেকেই শুকিয়ে আসে, তা আমাদের গভীরতর চেতনাকে উদ্বোধিত করে না। স্থৰ উঠছে তো উঠছে, নদী বইছে তো বইছে, গাছপালা বাড়ছে তো বাড়ছে, প্রতিদিনের কাজ নিয়মমতো চলছে তো চলছে। সেইজন্তে এমন কোনো দৃশু দেখতে ইচ্ছা করি যা প্রতিদিন দেখি নে, এমন কোনো ঘটনা জানতে কৌতুহল হয় যা আমাদের অভ্যস্ত ঘটনার সঙ্গে মেলে না । কিন্তু সত্যকে যখন জানি তখন আমাদের আত্মা পরিতৃপ্ত হয় । সত্য চিরনবীনতার রস অক্ষয় । সমস্ত ঘটনাবলীর মাঝখানে সেই অন্তরতম সত্যকে দেখলে দৃষ্টি সার্থক হয়। তখন সমস্তই মহত্ত্বে বিস্ময়ে জানমে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এইজন্তেই আমাদের ধ্যানের মন্ত্রে আমরা প্রতিদিন অন্তত একবার সমস্ত ৰিশ্বব্যাপারের মাঝখানে বিশ্বের যিনি পরমসত্য র্তাকে ধ্যান করবার চেষ্টা করে থাকি । ঘটনাপুঞ্জের মাঝখানে যিনি এক মূলশক্তি তাকে দর্শন করবার জন্তে দৃষ্টিকে অন্তরে