পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী লীলা । ( বঁাশরিকে জড়িয়ে ধরে ) আঃ, বাচালি ভাই আমাদের সবাইকে । স্বষমার উপর এখন আর তোর রাগ নেই ? বঁাশরি। কেন থাকবে । সে কি আমার চেয়ে জিতেছে। লীলা, দে ভাই সব দরজা খুলে সব আলোগুলো জালিয়ে— বাগান থেকে যতগুলো ফুল পাস নিয়ে আয় সংগ্রহ করে । [ লীলার প্রস্থান পুরন্দরের প্রবেশ বঁাশরি। এ কী সন্ন্যাসী, তুমি যে আমার ঘরে ? পুরন্দর। চলে যাচ্ছি দূরে, হয়তো আর দেখা হবে না। বঁাশরি। যাবার বেলায় আমার কথা মনে পড়ল ? পুরন্দর। তোমার কথা কখনোই ভুলি নি। ভোলবার মতো মেয়ে নও তুমি । নিত্যই এ কথা মনে রেখেছি তোমাকে চাই আমাদের কাজে— দুর্লভ দুঃসাধ্য তুমি, তাই দুঃখ দিয়েছি। বঁাশরি। পার নি দুঃখ দিতে। মরা কঠিন নয়, পেয়েছি তার প্রথম শিক্ষা । কিন্তু তোমাকে একটা শেষকথা বলব সন্ন্যাসী, শোনো। স্বযমাকে তুমি ভালোবাস, সুষমা জানে সেই কথা । তোমার ভালোবাসার সূত্রে গেথে ব্রতের হার পরেছে সে গলায়, তার আর ভাবনা কিসের । সত্য কি না বলে । * পুরন্দর। সত্য কি মিথ্যা সে-কথা বলে কোনো ফল নেই, দুইই সমান। বঁাশরি। সুষমার ভাগ্য ভালো কিন্তু সোমশংকরকে কী তুমি দিলে। পুরন্দর। সে পুরুষ, সে ক্ষত্রিয়, সে তপস্বী। বঁাশরি। হোক পুরুষ, হোক ক্ষত্রিয়, তার তপস্যা অপূর্ণ থাকবে আমি না থাকলে, আবশু্যক আছে আমাকে । পুরন্দর। বঞ্চিত হবার দুঃখই তাকে দেবে শক্তি। বঁাশরি। কখনোই না, তাতেই পলু করবে তার ব্রত। যে পারে ঐ ক্ষত্রিয়কে শক্তি দিতে এমন কেবল একটি মেয়ে আছে এ-সংসারে । পুরন্দর। জানি । বঁাশরি। সে সুষমা নয়। পুরন্দর। তাও জানি। কিন্তু ঐ বীরের শক্তি হরণ করতে পারে, এমনও একটি মাত্র মেয়ে আছে এ-সংসারে ।