পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o&b. রবীন্দ্র-রচনাবলী ঢেলা পথে ঘাটে, ঢেলা একটা ফুরোলে হাজারটা আসে– কিন্তু ভূত একটা । সেই ভূতটাকে ঝেড়ে ফেলতে পারলে ঢেলাগুলো পায়ে পড়ে থাকে, গায়ে পড়ে না। ভারতবর্ষের সেই পুরাতন প্রার্থনাকে আজ আবার সমস্ত প্রাণমন দিয়ে উচ্চারণ করবার সময় এসেছে, শুধু কণ্ঠ দিয়ে নয়, চিন্তা দিয়ে, কর্ম দিয়ে, শ্রদ্ধা দিয়ে, পরস্পরের প্রতি ব্যবহার দিয়ে : য একঃ অবর্ণ, যিনি এক এবং সকল বর্ণভেদের অতীত, স নো বুদ্ধ্যা শুভয়। সংযুক্ত তিনিই আমাদের শুভবুদ্ধি দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত করুন। S\}\o o সমাধান সমস্তার দিকে কেউ যদি অঙ্গুলি নির্দেশ করে অমনি দেশের কৃতী অকৃতী সকলে সেই ব্যক্তিকেই সমাধানের জন্ত দায়িক করে জবাব চেয়ে বসে। তারা বলে, আমরা তো একটা তবু যা হোক কিছু সমাধানে লেগেছি, তুমিও এমনি একটা সমাধান খাড়া করো, দেখা যাক তোমারই বা কত বড়ো যোগ্যতা । আমি জানি, কোনো ঔষধসত্রে এক বিলাতি ভাক্তার ছিলেন। তার কাছে এক বৃদ্ধ এসে করুণ স্বরে যেমনি বলেছে ‘জর অমনি তিনি ব্যস্ত হয়ে তখনি তাকে একটা অত্যন্ত তিতো জরম্ন রস গিলিয়ে দিলেন, সে লোকটা স্থাপিয়ে উঠল কিন্তু আপত্তি করবার সময় মাত্র পেল না । সেই সংকটের সময়ে আমি যদি ডাক্তারকে বাধা দিয়ে বলতুম, জর ওর নয়, জর ওর মেয়ের, তা হলে কি ডাক্তার রেগে আমাকে বলতে পারতেন যে, তবে তুমিই চিকিৎসা করে-না ; আমি তো তবু যা হয় একট-কোনো ওষুধ যাকে হয় একজনকে খাইয়েছি, তুমি তো কেবল ফাকা সমালোচনাই করলে । আমার এইটুকু মাত্র বলবার কথা যে, আসল সমস্যাট হচ্ছে, বাপের জর নয়, মেয়ের জ্বর, অতএব বাপকে ওষুধ খাওয়ালে এ সমস্তার সমাধান হবে না। কিন্তু বর্তমান ক্ষেত্রে সুবিধার কথাটা এই যে, আমি যেটাকে সমস্যা বলে নির্ণয় করছি, সে আপন সমাধানের ইঙ্গিত আপনিই প্রকাশ করছে। অবুদ্ধির প্রভাবে আমাদের মন দুর্বল ; অবুদ্ধির প্রভাবে আমরা পরম্পরবিচ্ছিন্ন— শুধু বিচ্ছিন্ন নই, পরস্পরের প্রতি বিরুদ্ধ ; অবুদ্ধির প্রভাবে বাস্তব জগৎকে বাস্তবভাবে গ্রহণ করতে পারি নে বলেই জীবনযাত্রায় আমরা প্রতিনিয়ত পরাহত ; অবুদ্ধির প্রভাবে স্ববুদ্ধির প্রতি আস্থা হারিয়ে আপ্তরিক স্বাধীনতার উৎসমুখে আমরা দেশজোড়া পরবশতার পাথর চাপিয়ে বসেছি । এইটেই যখন আমাদের সমস্ত তখন এর সমাধান শিক্ষা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না । 劇