পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8९९ রবীন্দ্র-রচনাবলী o স্বতো বোনে, তারও কাজ সেইরকম । সে যন্ত্র, সে নিঃসঙ্গ, সে বিচ্ছিন্ন। কনগ্রেসের কোনো মেম্বর যখন স্বতে কাটেন তখন সেই সঙ্গে দেশের ইকনমিক্স্-স্বর্গের ধ্যান করতেও পারেন, কিন্তু এই ধ্যানমস্ত্রের দীক্ষা তিনি অন্য উপায়ে পেয়েছেন— চরকার মধ্যেই এই মন্ত্রের বীজ নেই। কিন্তু, যে মানুষ গ্রাম থেকে মারী দূর করবার উদযোগ করছে তাকে যদি বা দুর্ভাগ্যক্রমে সম্পূর্ণ একলাও কাজ করতে হয়, তবু তার কাজের আদিতে ও অন্তে সমস্ত গ্রামের চিন্তা নিবিড়ভাবে যুক্ত। এই কাজের দ্বারাই নিজের মধ্যে সমগ্র গ্রামকে সে উপলব্ধি করে। গ্রামেরই হইতে তার সজ্ঞান আনন্দ । তারই কাজে স্বরাজসাধনার সত্যকার আরম্ভ বটে। তার পরে সেই কাজে যদি সমস্ত গ্রামের লোক পরস্পর যোগ দেয় তা হলেই বুঝব, গ্রাম নিজেকে নিজে স্বষ্টি করার দ্বারাই নিজেকে নিজে যথার্থরূপে লাভ করবার দিকে এগোচ্ছে । এই লাভ করাকেই বলে স্বরাজলাভ। পরিমাণ হিসেবে কম হলেও সত্য হিসাবে কম নয়। অর্থাৎ শতকরা একশোর হারে লাভ না হলেও হয়তো শতকরা একের হারে লাভ ; এই লাভই শতকরা একশোর সগোত্র, এমন-কি সহোদর ভাই। যে গ্রামের লোক পরস্পরের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-অন্ন-উপার্জনে আনন্দবিধানে সমগ্রভাবে সম্মিলিত হয়েছে সেই গ্রামই সমস্ত ভারতবর্ষের স্বরাজলাভের পথে প্রদীপ জেলেছে। তার পরে একটা দীপের থেকে আর-একটা দীপের শিখ জালানো কঠিন হবে না ; স্বরাজ নিজেই নিজেকে অগ্রসর করতে থাকবে, চরকার যান্ত্রিক প্রদক্ষিণপথে নয়, প্রাণের আত্মপ্রবৃত্ত সমগ্রবৃদ্ধির পথে । আশ্বিন ১৩৩২ রায়তের কথা শ্ৰীমান প্রমথনাথ চৌধুরী কল্যাণীয়েৰু আমাদের শাস্ত্রে বলে, সংসারটা উর্ধ্বমূল অবাকশাখ। উপরের দিক থেকে এর শুরু, নীচে এসে ডালপালা ছড়িয়েছে ; অর্থাৎ নিজের জোরে দাড়িয়ে নেই, উপরের থেকে ঝুলছে। তোমার ‘রায়তের কথা’ পড়ে আমার মনে হল যে, আমাদের পলিটিক্সও সেই জাতের। কনগ্রেসের প্রথম উৎপত্তিকালে দেখা গেল, এই জিনিসটি শিকড় মেলেছে উপরওয়ালাদের উপর মহলে— কি আহার কি আশ্রয় উভয়েরই জন্তে এর অবলম্বন সেই উধৰ্বলোকে । à ধাদের আমরা ভদ্রলোক বলে থাকি তারা স্থির করেছিলেন যে, রাজপুরুষে ও