পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९१8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ফিরে এসে বলাইকে বিলাতি কায়দায় শিক্ষণ দেবেন বলে প্রথমে নিয়ে গেলেন স্মিলেন্ধু—তার পরে বিলেত নিয়ে যাবার কথা। কাদতে কঁাদতে কাকির কোল ছেড়ে বলাই চলে গেল, আমাদের ঘর হল শূন্ত । তার পরে দু বছর যায়। ইতিমধ্যে বলাইয়ের কাকি গোপনে চোখের জল মোছেন, আর বলাইয়ের শূন্ত শোবার ঘরে গিয়ে তার ছেড়া একপাটি জুতো, তার রবারের ফাটা গোলা, আর জানোয়ারের গল্পওয়ালা ছবির বই নাড়েন-চাড়েন ; এতদিনে এই-সব চিহ্নকে ছাড়িয়ে গিয়ে বলাই অনেক বড়ো হয়ে উঠেছে, এই কথা বসে বসে চিন্তা করেন । কোনো এক সময়ে দেখলুম, লক্ষ্মীছাড়া শিমুলগাছটার বড়ো বাড় বেড়েছে— এতদূর অসংগত হয়ে উঠেছে যে, আর প্রশ্ৰয় দেওয়া চলে না। এক সময়ে দিলুম তাকে কেটে । o এমন সময়ে সিমলে থেকে বলাই তার কাকিকে এক চিঠি পাঠালে, “কাকি, আমার সেই শিমুলগাছের একটা ফোটোগ্রাফ পাঠিয়ে দাও।” বিলেত যাবার পূর্বে একবার আমাদের কাছে আসবার কথা ছিল, সে আর হল না। তাই বলাই তার বন্ধুর ছবি নিয়ে যেতে চাইলে । তার কাকি আমাকে ডেকে বললেন, “ওগো শুনছ, একজন ফোটোগ্রাফওয়ালা ডেকে আনো ।” জিজ্ঞাসা করলুম, “কেন।” বলাইয়ের কাচ হাতের লেখা চিঠি আমাকে দেখতে দিলেন। আমি বললেম, “সে গাছ তো কাটা হয়ে গেছে।” বলাইয়ের কাকি দু দিন অন্ন গ্রহণ করলেন না, আর অনেকদিন পর্যন্ত আমার সঙ্গে একটি কথাও কন নি। বলাইয়ের বাবা ওকে তার কোল থেকে নিয়ে গেল, সে যেন ওঁর নাড়ি ছিড়ে ; আর ওর কাকা তার বলাইয়ের ভালোবাসার গাছটিকে চিরকালের মতো সরিয়ে দিলে, তাতেও ওঁর যেন সমস্ত সংসারকে বাজল, তার বুকের মধ্যে ক্ষত করে দিলে । ঐ গাছ যে ছিল তার বলাইয়ের প্রতিরূপ, তারই প্রাণের দোসর । অগ্রহায়ণ, ১৩৩৫