পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లి} e রবীন্দ্র-রচনাবলী র্তার সমস্ত কৃত্য সমাপন করতে বেলা আড়াইটে হয়ে যায়। তার মেয়েটিকে তিনি স্বহস্তে সর্বাংশে এমনি পরিশুদ্ধ করে তুলেছেন যে, তার নিজের মত বা নিজের ইচ্ছা বলে কোনো উৎপাত ছিল না। কোনো ব্যবস্থায় ষত অমৃবিধাই হোক, সেটা পালন করা তার পক্ষে সহজ হয় যদি তার কোনো সংগত কারণ তাকে বুঝিয়ে না দেওয়া যায়। সে খাবার সময় ভালো কাপড় পরে না পাছে সকৃড়ি হয় ; সে ছায়া সম্বন্ধেও বিচার করতে শিখেছে । সে যেমন পালুকির ভিতরে বসেই গঙ্গাস্বান করে, তেমনি অষ্টাদশ পুরাণের মধ্যে আবৃত থেকে সংসারে চলে ফেরে। বিধি-বিধানের ’পরে আমারও মায়ের যথেষ্ট শ্রদ্ধা ছিল কিন্তু তার চেয়ে আরও বেশি শ্রদ্ধা যে আরকারও থাকবে এবং তাই নিয়ে সে মনে মনে গুমর করবে, এটা তিনি সইতে পারতেন না। এইজন্তে আমি যখন তাকে বললুম “মা, এ মেয়ের যোগ্যপাত্র আমি নই”, তিনি হেসে বললেন, “না, কলিযুগে তেমন পাত্র মেলা ভার!” আমি বললুম, “তা হলে আমি বিদায় নিই।” মা বললেন, “সে কি, স্বয়, তোর পছন্দ হল না ? কেন, মেয়েটিকে তো দেখতে ভালো ।” আমি বললুম, “ম, স্ত্রী তো কেবল চেয়ে চেয়ে দেখবার জন্তে নয়, তার বুদ্ধি থাকাও চাই ।” মা বললেন, “শোনো একবার । এরই মধ্যে তুই তার কম বুদ্ধির পরিচয় কী পেলি ।” আমি বললুম, “বুদ্ধি থাকলে মানুষ দিনরাত এই-সব অনৰ্থক অকাজের মধ্যে বঁাচতেই পারে না । ইপিয়ে মরে যায় ।” মায়ের মুখ শুকিয়ে গেল। তিনি জানেন, এই বিবাহ সম্বন্ধে বাবা অপর পক্ষে প্রায় পাকা কথা দিয়েছেন। তিনি আরও জানেন যে, বাবা এটা প্রায়ই ভুলে ধান যে, জন্য মানুষেরও ইচ্ছে বলে একটা বালাই থাকতে পারে। বস্তুত, বাবা যদি অত্যন্ত বেশি রাগারগি জবরদস্তি না করতেন তা হলে হয়তো কালক্রমে ঐ পৌরাণিক পুতুলকে বিবাহ করে আমিও একদিন প্রবল রোথে স্নান আহ্নিক এবং ব্ৰত-উপবাস করতে করতে গঙ্গাতীরে সদগতি লাভ করতে পারতুম। অর্থাৎ, মায়ের উপর যদি এই বিবাহ দেবার ভার থাকত তা হলে তিনি সময় নিয়ে, অতি ধীর মন্দ সুযোগে ক্ষণে ক্ষণে কানে মন্ত্র দিয়ে, ক্ষণে ক্ষণে অশ্রপাত ক’রে কাজ উদ্ধার করে নিতে পারতেন । বাবা যখন কেবলই তর্জন গর্জন করতে লাগলেন আমি তাকে মরিয়া হয়ে বললুম, ছেলেবেলা থেকে থেতে-শুতে চলতে-ফিরতে আমাকে আত্মনির্ভরতার উপদেশ দিয়েছেন, কেবল বিবাহের বেলাতেই কি আত্মনির্ভর চলবে না।’ কলেজে