পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ©8ፃ বের করে পুতে দেখা গেছে, তার থেকে অঙ্কুর বেরিয়েছে— তেমনি মামুষের মন্থন্যত্ব বিপুল মুতস্তপের মধ্যে থেকেও সম্পূর্ণ মরতে চায় না। আমি বিশ্বপতিকে বললুম, “পাত্র আমার জানা আছে, কোনো বাধা হবে না। আপনার কথা এবং দিন ঠিক করুন।” “কিন্তু মেয়ে না দেখেই তো আর—” *না দেখেই হবে।” “কিন্তু, পাত্র যদি সম্পত্তির লোভ করে সে বড়ো বেশি নেই। মা মরে গেলে কেবল ঐ বাড়িখানি পাবে, আর সামান্ত যদি কিছু পায় ।”

  • পাত্রের নিজের সম্পত্তি আছে, সেজন্তে ভাবতে হবে না।” *ৰ্তার নাম বিবরণ প্রভৃতি—” *সে এখন বলব না, তা হলে জানাজানি হয়ে বিবাহ ফেলে যেতে পারে।” “মেয়ের মাকে তো তার একটা বর্ণনা দিতে হবে।” *বলবেন, লোকটা অন্য সাধারণ মামুষের মতো দোষে গুণে জড়িত। দোষ এত বেশি নেই যে ভাবনা হতে পারে ; গুণ ও এতবেশি নেই যে লোভ করা চলে। আমি যতদূর জানি তাতে কথার পিতামাতারা তাকে বিশেষ পছন্দ করে, স্বয়ং কন্যাদের মনের কথা ঠিক জানা যায় নি।”

বিশ্বপতিবাবু এই ব্যাপারে যখন অভ্যস্ত কৃতজ্ঞ হলেন তখন র্তার উপরে আমার ভক্তি বেড়ে গেল। যে-কারবারে ইতিপূর্বে র্তার সঙ্গে আমার দরে বনছিল না, সেটাতে লোকসান দিয়েও রেজিস্ট্রী দলিল সই করবার জন্তে আমার উৎসাহ হল । তিনি যাবার সময় বলে গেলেন, “পাত্রটিকে বলবেন, অন্য সব বিষয়ে যাই হোক, এমন গুণবতী মেয়ে কোথাও পাবেন না ।” ঘে-মেয়ে সমাজের আশ্রয় থেকে এবং শ্রদ্ধা থেকে বঞ্চিত তাকে যদি হৃদয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত করা যায় তা হলে সে মেয়ে কি আপনাকে উৎসর্গ করতে কিছুমাত্র কৃপণতা করবে। যে মেয়ের বড়ো রকমের আশা আছে তারই আশার অস্ত থাকে না। কিন্তু, এই দীপালির দীপটি মাটির, তাই আমার মতো মেটে ঘরের কোণে তার শিখাটির অমর্যাদা হবে না । সন্ধ্যার সময় অালো জেলে বিলিতি কাগজ পড়ছি, এমন সময় খবর এল, একটি মেয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। বাড়িতে স্ত্রীলোক কেউ নেই, তাই ব্যস্ত হয়ে পড়লুম। কোনো ভদ্র উপায় উদ্ভাবনের পূর্বেই মেয়েটি ঘরের মধ্যে ঢুকে প্রণাম করলে। বাইরে থেকে কেউ বিশ্বাস করবে না, কিন্তু আমি অত্যন্ত লাজুক মানুষ। আমি