পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిఆ রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রকৃতি। তাই তো বললেন, তিনি আমার আপন জাতেরই। মা। জাত লুকোস নি ? বলেছিলি ষে তুই চণ্ডালিনী ? প্রকৃতি । বলেছিলেম। তিনি বললেন, মিথ্যে কথা । তিনি বললেন, শ্রাবণের কালে মেঘকে চণ্ডাল নাম দিলেই বা কী, তাতে তার জাত বদলায় না, তার জলের ঘোচে না গুণ। তিনি বললেন, নিন্দে কোরো না নিজেকে। আত্মনিন্দ পাপ, আত্মহত্যার চেয়ে বেশি। মা ! তোর মুখে এ-সব কী শুনছি। তোর কি মনে পড়েছে পূর্বজন্মের কোনো কাহিনী । প্রকৃতি । এ কাহিনী আমার নতুন জন্মের । মা। হাসালি তুই। নতুন জন্ম ! ঘটল কবে । প্রকৃতি । সেদিন রাজবাড়িতে বাজল বেলা-দুপুরের ঘণ্টা, বা কী করছে রোদদুর । মা-মরা বাছুরটাকে নাওয়াচ্ছিলুম কুয়োর জলে । কখন সামনে দাড়ালেন বৌদ্ধ ভিক্ষু, পীত বসন তার। বললেন, জল দাও । প্রাণটা উঠল চমকে, শিউরে উঠে প্ৰণাম করলেম দুর থেকে। ভোর বেলাকার আলো দিয়ে তৈরি তার রূপ। বললেম, আমি চণ্ডালের মেয়ে, কুয়োর জল অশুদ্ধ । তিনি বললেন, যে-মানুষ আমি তুমিও সেই মানুষ ; সব জলই তীৰ্থজল যা তাপিতকে স্নিগ্ধ করে, তৃপ্ত করে তৃষিতকে। প্রথম শুনলুম এমন কথা, প্রথম দিলুম এক গণ্ডুষ জল, যার পায়ের ধুলোর এক কণা নিতে কেঁপে উঠত বুক । মা। ওরে অবোধ মেয়ে, হঠাৎ এতবড়ো হল তোর বুকের পাট ! এ পাগলামির প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে । জানিস নে কোন কুলে তোর জন্ম ? প্রকৃতি । কেবল একটি গণ্ডুষ জল নিলেন আমার হাত থেকে, অগাধ অসীম হল সেই জল। সাত সমুদ্র এক হয়ে গেল সেই জলে, ডুবে গেল আমার কুল, ধুয়ে গেল আমার জন্ম । মা ! তোর মুখের কথা মৃদ্ধ বদলে গেছে যে ! জাদু করেছে তোর কথাকে । কী বলিস নিজে বুঝতে পারিস কিছু ? প্রকৃতি । সমস্ত শ্রাবস্তীনগরে আর কি কোথাও জল ছিল না, মা ! এলেন কেন এই কুয়োরই ধারে । একেই তো বলি নতুন জন্মের পালা। আমাকে দান করতে এলেন মানুষের তৃষ্ণা মেটাবার শিরোপা। এই মহাপুণ্যই খুজিছিলেন যে-জলে ব্ৰত হুল পূর্ণ সে জল তো আর কোথাও পেতেন না, কোনো তীর্থেই না। তিনি বললেন, বনবাসের গোড়াতেই জানকী এই জলেই স্বান করেছিলেন, সে-জল তুলে এনেছিল