পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 • রবীন্দ্র-রচনাবলী অনুকূল কথা হতে পারে; কিন্তু, এইরকমের অমূলক কি সমূলক তত্ত্বালোচনা রসশাস্ত্রে সম্পূর্ণই অসংগত। ংক্ষেপে আমার কথাট। দাড়ালো এই— সাহিত্যের বিচার হচ্ছে সাহিত্যের ব্যাখ্য', সাহিত্যের বিশ্লেষণ নয়। এই ব্যাখ্যা মুখ্যত সাহিত্যবিষয়ের ব্যক্তিকে নিয়ে, তার জাতিকুল নিয়ে নয়। অবশু সাহিত্যের ঐতিহাসিক বিচার কিম্বা তাত্ত্বিক বিচার হতে পারে। সেরকম বিচারে শাস্ত্রীয় প্রয়োজন থাকতে পারে, কিন্তু তার সাহিত্যিক প্রয়োজন নেই । 99\s আধুনিক কাব্য মডার্ন বিলিতি কবিদের সম্বন্ধে আমাকে কিছু লিখতে অনুরোধ করা হয়েছে । কাজটা সহজ নয়। কারণ, পাজি মিলিয়ে মডার্নের সীমানা নির্ণয় করবে কে। এটা কালের কথা ততটা নয় যতটা ভাবের কথা । নদী সামনের দিকে সোজা চলতে চলতে হঠাৎ বাক ফেরে। সাহিত্যও তেমনি বরাবর সিধে চলে না। যখন সে বঁাক নেয় তখন সেই বাকটাকেই বলতে হবে মডার্ন। বাংলায় বলা যাক আধুনিক । এই আধুনিকট সময় নিয়ে নয়, মজি নিয়ে। বাল্যকালে যে ইংরেজি কবিতার সঙ্গে আমার পরিচয় হল তখনকার দিনে সেটাকে আধুনিক বলে গণ্য করা চলত। কাব্য তখন একটা নতুন বঁাক নিয়েছিল, কবি বার্নস্ থেকে তার শুরু । এই ঝোকে একসঙ্গে অনেকগুলি বড়ো বড়ো কবি দেখা দিয়েছিলেন। যথা ওয়ার্ড স্বার্থ, কোলরিজ শেলি কীটস । সমাজে সর্বসাধারণের প্রচলিত ব্যবহার রীতিকে আচার বলে । কোনো কোনো দেশে এই আচার ব্যক্তিগত অভিরুচির স্বাতন্ত্র্য ও বৈচিত্র্যকে সম্পূর্ণ চাপ দিয়ে রাখে। সেখানে মানুষ হয়ে ওঠে পুতুল, তার চালচলন হয় নিখুত কেতা-দুরন্ত । সেই সনাতন অভ্যস্ত চালকেই সমাজের লোকে খাতির করে। সাহিত্যকেও এক-এক সময়ে দীর্ঘকাল আচারে পেয়ে বলে— রচনায় নিখুত রীতির ফোটাতিলক কেটে চললে লোকে তাকে বলে সাধু। কবি বার্নসের পরে ইংরেজি কাব্যে ষে যুগ এল সে-যুগে রীতির বেড়া ভেঙে মানুষের মঞ্জি এসে উপস্থিত। 'কুমুদকহুলারসেৰিত সরোবর হচ্ছে সাধুকারখানায় তৈরি সরকারি ঠুলির বিশেষ ছিদ্র দিয়ে দেখা সরোবর। সাহিত্যে কোনো সাহসিক সেই ঠুলি খুলে ফেলে, বুলি সরিয়ে, পুরো চোখ দিয়ে ৰখন সরোবর দেখে তখন