পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ २8१ স্ত্রীর পত্র শ্ৰীচরণকমলেষু আজ পনেরো বছর আমাদের বিবাহ হয়েছে, আজ পর্যন্ত তোমাকে চিঠি লিখি নি । চিরদিন কাছেই পড়ে আছি— মুখের কথা অনেক শুনেই, আমিও শুনেছি ; চিঠি লেখবার মতো ফাকটুকু পাওয়া যায় নি । আজ আমি এসেছি তীর্থ করতে শ্ৰীক্ষেত্রে, তুমি আছ তোমার আপিলের কাজে । শামুকের সঙ্গে খোলসের যে-সম্বন্ধ কলকাতার সঙ্গে তোমার তাই ; সে তোমার দেহমনের সঙ্গে এটে গিয়েছে ; তাই তুমি আপিলে ছুটির দরখাস্ত করলে না। বিধাতার তাই অভিপ্রায় ছিল ; তিনি আমার ছুটির দরখাস্ত মঞ্জুর করেছেন। আমি তোমাদের মেজোৰউ । আজ পনেরো বছরের পরে এই সমুদ্রের ধারে দাড়িয়ে জানতে পেরেছি, আমার জগং এবং জগদীশ্বরের সঙ্গে আমার অন্ত সম্বন্ধ ও আছে। তাই আজ সাহস করে এই চিঠিখানি লিখছি, এ তোমাদের মেজোবউয়ের চিঠি নয় । তোমাদের সঙ্গে আমার সম্বন্ধ কপালে যিনি লিখেছিলেন তিনি ছাড়া যখন সেই সম্ভাবনার কথা আর কেউ জানত না, সেই শিশুবয়সে আমি আর আমার ভাই একসঙ্গেই সান্ত্রিপাতিক জরে পড়ি । আমার ভাইটি মারা গেল, আমি বেঁচে উঠলুম। পাড়ার সব মেয়েরাই বলতে লাগল, “মৃণাল ময়ে কি না, তাই ও বাচল, বেটাছেলে হলে কি আর রক্ষা পেত ?” চুরিবিদ্যাতে ধম পাক, দামি জিনিসের পরেই তার লোভ। আমার মরণ নেই। সেই কথাটাই ভালো করে বুঝিয়ে বলবার জন্যে এই চিঠিখানি লিখতে বসেছি । যেদিন তোমাদের দূরসম্পর্কের মামা তোমার বন্ধু নীরদকে নিয়ে কনে দেখতে এলেন, তখন আমার বয়স বারো । দুর্গম পাড়াগায়ে আমাদের বাড়ি, সেখানে দিনের বেলা শেয়াল ডাকে । স্টেশন থেকে সাত ক্রোশ শু্যাকুরা গাড়িতে এসে বাকি ডিন মাইল র্কাচ রাস্তায় পালকি করে তবে আমাদের গায়ে পৌছনো যায়। সেদিন তোমাদের কী হয়রানি । তার উপরে আমাদের বাঙাল দেশের রান্না— সেই রান্নার প্রহসন আজ ও মামা ভোলেন নি । " তোমাদের বড়োবউয়ের রূপের অভাব মেজোবউকে দিয়ে পূরণ করবার জন্তে তোমার মায়ের একান্ত জিদ ছিল । নইলে এত কষ্ট করে আমাদের সে গায়ে তোমরা যাবে কেন ? বালা দেশে পিলে যকৃৎ অম্লশূল এবং কনের জন্তে তো কাউকে খোজ করতে হয় না— তারা আপনি এসে চেপে ধরে, কিছুতে ছাড়তে চায় না।