পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ WoS& ধারে বসে আছে, তার লাঠির ডগাটা এইখান থেকে দেখা যাচ্ছে। এখন পকেটের কথাটা বন্ধ রেখে জীবনের কথা একটুখানি ভেবে দেখা যাক। কিন্তু, জীবনের যে-অংশে মুলতুবি পড়েছে সে-অংশে আর তো ফিরে যাওয়া চলবে না। তবু তার ছিন্নতায় তালি লাগাবার সময় এখনো সম্পূর্ণ যায় নি। এখান থেকে কাজের গতিকে পশ্চিমের এক শহরে যেতে হল । সেখানে বিশ্বপতিবাবু ধনী বাঙালি মহাজন। তাকে নিয়ে আমার কাজের কথা ছিল। লোকটি খুব হুশিয়ার, স্বতরাং তার সঙ্গে কোনো কথা পাকা করতে বিস্তর সময় লাগে। একদিন বিরক্ত হয়ে যখন ভাবছি 'একে নিয়ে আমার কাজের সুবিধা হবে না’, এমন-কি, চাকরকে আমার জিনিসপত্র প্যাক করতে বলে দিয়েছি, হেনকালে বিশ্বপতিবাৰু সন্ধ্যার সময় এসে আমাকে বললেন, “আপনার সঙ্গে নিশ্চয়ই অনেকরকম লোকের আলাপ আছে, আপনি একটু মনোযোগ করলে একটি বিধবা বেঁচে যায়।” ঘটনাটি এই – নন্দকৃষ্ণবাবু বেরেলিতে প্রথমে আসেন একটি বাঙালি-ইংরাজি স্কুলের হেডমাস্টার হয়ে । কাজ করেছিলেন খুব ভালো । সকলেই আশ্চর্ষ হয়েছিল— এমন স্থযোগ্য স্বশিক্ষিত লোক দেশ ছেড়ে, এত দূরে সামান্ত বেতনে চাকরি করতে এলেন কী কারণে। কেবল যে পরীক্ষণ পাস করাতে র্তার খ্যাতি ছিল তা নয়, সকল ভালো কাজেই তিনি হাত দিয়েছিলেন । এমন সময় কেমন করে বেরিয়ে পড়ল, তার স্ত্রীর রূপ ছিল বটে কিন্তু কুল ছিল না ; সামান্ত কোন জাতের মেয়ে, এমন-কি তার ছোওয়া লাগলে পানীয় জলের পানীয়তা এবং অন্যান্ত নিগূঢ় সাত্বিক গুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাকে যখন সবাই চেপে ধরলে তিনি বললেন, ই, জাতে ছোটো বটে, কিন্তু তবু সে তার স্ত্রী। তখন প্রশ্ন উঠল, এমন বিবাহ বৈধ হয় কী করে। যিনি প্রশ্ন করেছিলেন নন্দকৃষ্ণৰাৰু তাকে বললেন, “আপনি তো শালগ্রাম সাক্ষী করে পরে পরে দুটি স্ত্রী বিবাহ করেছেন, এবং দ্বিবচনেও সন্তুষ্ট নেই তার বহু প্রমাণ দিয়েছেন। শালগ্রামের কথা বলতে পারি নে কিন্তু অন্তর্যামী জানেন, আমার বিবাহ আপনার বিবাহের চেয়ে বৈধ, প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে বৈধ—এর চেয়ে বেশি কথা আমি আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই নে।” যাকে নন্দকৃষ্ণ এই কথাগুলি বললেন তিনি খুশি হয় নি। তার উপরে লোকের অনিষ্ট করবার ক্ষমতাও তার অসামান্ত ছিল । স্বতরাং সেই উপদ্রবে নন্দকৃষ্ণ বেরিলি ত্যাগ করে এই বর্তমান শহরে এসে ওকালতি শুরু করলেন । লোকটা অত্যন্ত খুংখুতে ছিলেন— উপবাণী থাকলেও অন্যায় মকদম তিনি কিছুতেই নিতেন না। 이 3