পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬২ রবীন্দ্র-রচনাবলী রাজপুত্র। আর, রোজ রোজ ঐ-ষে চারণদের স্তব শুনতে হয় একই বাধা ছন্সে – সেই শাদুলবিক্রীড়িত । সদাগর। আমার তো মনে হয়, স্তব জিনিসটা বারবার স্বতই শোনা যায় ততই লাগে ভালো। কিছুতেই পুরোনো হয় না । রাজপুত্র। ঘুম ভাঙতেই সেই এক বৈতালিকের দল। আর, রোজ সকালে সেই এক পুরুতঠাকুরের ধান দুর্ব দিয়ে আশীৰ্বাদ । আর আসতে যেতে দেখি, সেই বুড়ো কষ্ণুকীটা কাঠের পুতুলের মতো খাড়া দাড়িয়ে আছে দরজার পাশে । কোথাও যাবার জন্যে একটু পা বাড়িয়েছি কি অমনি কোথা থেকে প্রতিহারী এসে হাজির, বলে— ইত ইতে), ইত ইতে, ইত ইতো। সব্বাই মিলে মনটাকে যেন বুলি-চাপা দিয়ে রেখেছে । সদাগর। কেন, মাঝে মাঝে যখন শিকারে যাও তখন বুনোজন্তু ছাড়া আর-কোনো উৎপাত তো থাকে না । রাজপুত্র । বুনোজন্তু বলো কাকে । আমার তো সন্দেহ হয়, রাজশিকারী বাঘগুলোকে আফিম থাইরে রাখে। ওরা যেন অহিংশ্রনীতির দীক্ষা নিয়েছে। এ পর্যন্ত একটাকেও তো ভদ্ররকম লাফ মারতে দেখলুম না । সদাগর। যাই বল, বাঘের এই আচরণকে আমি তো অসৌজন্য বলে মনে করি নে। শিকারে যাবার ধুমধামটা সম্পূর্ণই থাকে, কেবল বুক দুরূদ্ধর করে না। রাজপুত্র। সেদিন ভালুকটাকে বহুদূর থেকে তীর বিধেছিলুম, তা নিয়ে চার দিক থেকে ধন্য-ধন্য পড়ে গেল ; বললে, রাজপুত্রের লক্ষ্যভেদের কী নৈপুণ্য । তার পরে কানাকানিতে শুনলুম, একটা মরা ভালুকের চামড়ার মধ্যে খড়বিচিলি ভরে দিয়ে সাজিয়ে রেখেছিল। এতবড়ে পরিহাস সহ করতে পারি নি। শিকারীকে কারাদণ্ডের আদেশ করে দিয়েছি । সদাগর। তার উপকার করেছ। তার সে কারাগারটা রানীমার অন্দরমহলের সংলগ্ন, সে দিব্য স্বখে আছে । এই তো সেদিন, তার জন্ত তিন মন খি আর তেত্রিশটা পাঠা পাঠিয়ে দিয়েছি আমাদের গদি থেকে । রাজপুত্র। এর অর্থ কী । সদাগর। সে ভালুকটার স্থষ্টি যে রানীমারই আদেশে । রাজপুত্র। ঐ তো। আমরা পড়েছি অসত্যের বেড়াজালে । নিরাপদের খাচায় থেকে থেকে আমাদের ডানা আড়ষ্ট হয়ে গেল। আগাগোড়া সবই অভিনয় । আমাকে যুবরাজী সঙ বানিয়েছে। আমার এই রাজসাজ ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ঐ-ৰে