পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চণ্ডালিকা ৷ ›8ዓ প্রকৃতি । সেই ভালো, মা, থাক তোমার মন্ত্র । আর কাজ নেই –না না না না— পথ আর কতখানিই বা ! শেষ পর্যন্ত আসতে দে তাকে, আসতে দে, আমার এই বুকের কাছ পর্যন্ত। তারপরে সব দুঃখ দেব মিটিয়ে, আমার বিশ্বসংসার উজাড় করে দিয়ে। গভীর রাত্রে এসে পৌছবে পথিক, সমস্ত বুকের জাল দিয়ে জালিয়ে দেব প্রদীপ, আছে স্বধার ঝরনা গভীর অস্তরে, তারি জলে অভিষেক হবে তার—যে শ্রাস্ত, ষে তপ্ত, যে ক্ষতবিক্ষত। আর-একবার সে চাইবে, জল দাও— আমার হৃদয়সমুদ্রের জল ! আসবে সেইদিন । তোর মন্ত্র চলুক, চলুক।

  • ोंन

দুঃখ দিয়ে মেটাব দুঃখ তোমার, স্নান করবে অতল জলে বিপুল বেদনার । মোর সংসার দিব যে জালি, শোধন হবে এ মোহের কালি, মরণব্যথা দিব তোমার চরণে উপহার ॥ মা। এত দেরি হবে জানতুম না, বাছা । আমার মন্ত্র শেষ হল বুঝি। আমার প্রাণ যে কণ্ঠে এসেছে। প্রকৃতি। ভয় নেই, ম, আর-একটু সয়ে থাক। একটুখানি। বেশি দেরি নেই। মা। আষাঢ় তো পড়েছে, ওঁদের চাতুর্মাস্ত তো আরম্ভ হল । প্রকৃতি । ওঁরা গেছেন বৈশালীতে গোশিরসংঘে । ম। কী নিষ্ঠুর তুই ! সে যে অনেক দূর । প্রকৃতি । বহুদূর নয় । সাত দিনের পথ । পনরো দিন তো কেটে গেল । এতদিনে মনে হচ্ছে, টলেছে আসন, আসছে আসছে, যা বহুদূর, যা লক্ষৰোজন দুর, যা চন্দ্রস্থর্য পেরিয়ে, আমার দু হাতের নাগাল থেকে যা অসীম দূরে তাই আসছে কাছে । আসছে, কঁপিছে আমার বুক ভূমিকম্পে । মা। মস্ত্রের সর্ব অঙ্গ পূর্ণ করেছি, এতে বজ্রপাণি ইন্দ্রকে আনতে পারত টেনে । ভৰু দেরি হচ্ছে। কী মরণান্তিক যুদ্ধই চলছে। কী দেখেছিলি তুই আয়নাতে। প্রকৃতি। প্রথম দেখেছি, আকাশজোড়া কুয়াশা, দৈত্যের সঙ্গে লড়াই করে ক্লাস্ত দেবতার ফ্যাকাশে মুখের মতো । কুয়াশার ফাকে ফঁাকে বেরোচ্ছে আগুন । তারপরে কুয়াশাট। স্তবকে স্তবকে ছিড়ে ছিড়ে গেল— ফুলে-ওঠা ফেটে-পড়া প্রকাও বিষফোড়ার মতো—লাল হয়ে উঠল রঙ । সেদিন গেল। পরের দিন দেখি, পিছনে ঘন কালো