পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b" রবীন্দ্র-রচনাবলী তারা যদি তুলত ধ্বনি, তাদের দীপ্ত শিখা ওই আকাশে লিখত যদি লিখা, রাত্রিদিনকে-কাদিয়ে-তোলা ব্যাকুল প্রাণের ব্যথা পেত যদি ভাষার উদ্বেলতা, তবে হোথায় দেখা দিত পাথর-ভাঙা স্রোতে মানবচিত্ত-তুঙ্গশিখর হতে সাগর-খোজ নিঝর সেই, গজিয়া নতিয়া ছুটছে যাহ। নিত্যকালের বক্ষে আবতিয়া কান্নাহাসির পাকে – তাহা হলে তেমনি করেই দেখে নিতেম তাকে চমক লেগে হঠাৎ পথিক দেখে যেমন ক’রে নায়েগারার জলপ্রপাত অবাক দৃষ্টি ভরে। যুদ্ধ লাগল স্পেনে ; চলছে দারুণ ভ্রাতৃহত্যা শতন্ত্রীবাণ হেনে । সংবাদ তার মুখর হল দেশ-মহাদেশ জুড়ে, সংবাদ তার বেড়ায় উড়ে উড়ে দিকে দিকে যন্ত্রগরুড়রথে উদয়রবির পথ পেরিয়ে অস্তরবির পথে । কিন্তু যাদের নাই কোনো সংবাদ, কণ্ঠে যাদের নাইকো সিংহনাদ, সেই-যে লক্ষ-কোটি মানুষ কেউ কালো কেউ ধলো, তাদের বাণী কে শুনছে আজ বলে । তাদের চিত্তমহাসাগর উদাম উত্তাল মগ্ন করে অস্তবিহীন কাল ; ওই তো তাহ সম্মুখেতেই, চার দিকে বিস্তৃত পৃথ্বীজোড়া মহাতুফান, তবু দোলায় নি তো তাহারই মাঝখানে-বসা আমার চিত্তখানি । এই প্রকাগু জীবননাট্যে কে দিয়েছে টানি প্রকাণ্ড এক অটল যবনিকা ।