পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী তখন জাগিছে উষা বরুণীর তীরে, পূর্ব বনাস্তরে । ঘাটে বাধা আছে তরী। ‘হে বিদেশী, এসে এসো কহিল সুন্দরী দাড়ায়ে নৌকার পরে, “হে আমার প্রিয়, শুধু এই কথা মোর স্মরণে রাখিয়ো, তোমা সাথে এক শ্ৰেণতে ভাসিলাম আমি সকল বন্ধন টুটি হে হৃদয়স্বামী, জীবনমরণপ্রভু ! নৌকা দিল খুলি । দুই তীরে বনে বনে গাহে পাখিগুলি আনন্দ-উংসব-গান । প্রেয়সীর মুখ দুই বাহু দিয়া তুলি ভরি নিজ বুক বজ্ৰসেন শুধাইল, ‘কহো মোরে প্রিয়ে, আমারে করেছ মুক্ত কী সম্পদ দিয়ে । সম্পূর্ণ জানিতে চাহি অয়ি বিদেশিনী, এ দীনদরিদ্রজন তব কাছে ঋণী কত ঋণে ? আলিঙ্গন ঘনতর করি ‘সে কথা এখন নহে কহিল সুন্দরী । নৌকা ভেসে চলে যায় পূর্ণবায়ুভরে তুর্ণস্রোতোবেগে । মধ্যগগনের পরে উদিল প্রচণ্ড স্বর্য। গ্রামবধূগণ গৃহে ফিরে গেছে করি স্নান সমাপন সিক্তবস্ত্রে, কাংস্ত্যঘটে লয়ে গঙ্গাজল । ভেঙে গেছে প্রভাতের হাট ; কোলাহল থেমে গেছে দুই তীরে ; জনপদবাট পাস্থহীন । বটতলে পাষাণের ঘাট, সেথায় বাধিল নৌকা স্নানাহার-তরে কর্ণধার। তন্দ্রাঘন বটশাখা-’পরে ছায়ামগ্ন পক্ষিনীড় গীতশব্দহীন । অলস পতঙ্গ শুধু গুঞ্জে দীর্ঘ দিন ।