পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 S8 রবীন্দ্র-রচনাবলী না। যে-ভিক্ষুক পথপ্রান্তে বৃক্ষতলে শয়ন করিত, সে আজ গৃহস্থের গোশালায় चांड्वंम्र लहेब्रां८छ् । সে রাত্রে শৃগাল-কুকুর নগরের পথে পথে বিচরণ করিতেছে, দুই-একটা চিতাবাঘ গৃহস্থের দ্বারের কাছে আসিয়া উকি মারিতেছে। মাহুষের মধ্যে কেবল এক জন মাত্র আজ গৃহের বাহিরে আছে—জার মানুষ নাই। সে একখানা চুরি লইয়া নদীতীরে পাথরের উপর শান দিতেছে, এবং অন্তমনস্ক হইয়া কী ভাবিতেছে। ছুরির ধার যথেষ্ট ছিল, কিন্তু সে বোধ করি ছুরির সঙ্গে সঙ্গে ভাবনাতেও শান দিতেছিল, তাই তার শান দেওয়া আর শেষ হইতেছিল না। প্রস্তরের ঘর্ষণে তীক্ষ ছুরি হিসহিস শব্দ করিয়া হিংসার লালসায় তপ্ত হইয়া উঠিতেছিল। অন্ধকারের মধ্যে অন্ধকার নদী বহিয়া যাইতেছিল। জগতের উপর দিয়া অন্ধকার রজনীর প্রহর বহিয়া যাইতেছিল। আকাশের উপর দিয়া অন্ধকার ঘনমেঘের স্রোত ভাসিয়া যাইতেছিল । অবশেষে যখন মুষলধারে বৃষ্টি পড়িতে আরম্ভ হইল, তখন জয়সিংহের চেতনা হইল । তপ্ত ছুরি খাপের মধ্যে পুরিয়া উঠিয়া দাড়াইলেন । পূজার সময় নিকটবর্তী হইয়াছে। র্তfহার শপথের কথা মনে পড়িয়াছে। আর এক দণ্ডও বিলম্ব করিলে চলিবে না । মন্দির আজ সহস্র দীপে আলোকিত। ত্রয়োদশ দেবতার মাঝখানে কালী দাড়াইয়া নররক্তের জন্ত জিহবা মেলিয়াছেন । মন্দিরের সেবকদিগকে বিদায় করিয়া দিয়া চতুর্দশ দেবপ্রতিমা সম্মুখে করিয়া রঘুপতি একাকী মন্দিরে বসিয়া আছেন। তাহার সম্মুখে এক দীর্ঘ খাড়া । উলঙ্গ উজ্জল খড়গ দীপালোকে বিভাসিত হইয়া স্থির বজ্রের ন্যায় দেবীর আদেশের জন্য অপেক্ষা করিয়া আছে । অধরাত্রে পূজা। সময় নিকটবর্তী। রঘুপতি অত্যস্ত অস্থির চিত্তে জয়সিংহের জন্ত অপেক্ষা করিয়া আছেন। সহসা ঝড়ের মতো বাতাস উঠিয়া মুষলধারে বৃষ্টি পড়িতে আরম্ভ হইল। বাতাসে মন্দিরের সহস্র দ্বীপশিখা কঁাপিতে লাগিল, উলঙ্গ খঙ্গের উপর বিদ্যুৎ খেলিতে লাগিল। চতুর্দশ দেবতা এবং রঘুপতির ছায়া ৰেন জীবন পাইয়া দীপশিখার নৃত্যের তালে তালে মন্দিরের ভিত্তিময় নাচিতে লাগিল । একটা নরকপাল ঝড়ের বাতাসে ঘরময় গড়াইতে লাগিল। মন্দিরের মধ্যে দুইটা চামচিক আসিয়া শুষ্ক পত্রের মতো ক্রমাগত উড়িয়া বেড়াইতে লাগিল—দেয়ালে তাহাজের ছায়া উড়িতে লাগিল । দ্বিপ্রহর হইল। প্রথমে নিকটে পরে দূর দূরান্তরে শৃগাল ভাকিয়া উঠিল ।