পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8४२ রবীন্দ্র-রচনাবলী । একদিন গুরুজি সাহস করিয়া দামিনীকে যথাসম্ভব মৃদুমধুর স্বরে বলিলেন, দামিনী, আজ বিকালের দিকে তোমার কি সময় হইবে ? তা হইলে— J দামিনী কহিল, না । কেন বলে দেখি । পাড়ায় নাডু কুটিতে যাইব । নাডু কুটিতে ? কেন ? নন্দীদের বাড়ি বিয়ে । সেখানে কি তোমার নিতান্তই— ই, আমি তাদের কথা দিয়াছি । আর কিছু না বলিয়া দামিনী একটা দমক হাওয়ার মতো চলিয়া গেল। শচীশ সেখানে বসিয়াছিল, সে তো অবাক । কত মানী গুণী ধনী বিদ্বান তার গুরুর কাছে মাথ৷ নত করিয়াছে, আর ওই একটুখানি মেয়ে ওর কিসের এমন অকুষ্ঠিত তেজ ! আর-একদিন সন্ধ্যার সময় দামিনী বাড়ি ছিল। সেদিন গুরু একটু বিশেষভাবে একটা বড়ে রকমের কথা পাড়িলেন। খানিক দূর এগোতেই তিনি আমাদের মুখের দিকে তাকাইয়া একটা যেন ফাক কিছু বুঝিলেন। দেখিলেন, আমরা অন্যমনস্ক । পিছন ফিরিয়া চাহিয়া দেখিলেন, দামিনী যেখানে বসিয়া জামায় বোতাম লাগাইতেছিল সেখানে সে নাই। বুঝিলেন, আমরা দুইজনে ওই কথাটাই ভাবিতেছি যে, দামিনী উঠিয়া চলিয় গেল। তার মনে ভিতরে ভিতরে ঝুমঝুমির মতো বারবার বাজিতে লাগিল যে দামিনী শুনিল না, তার কথা শুনিতেই চাহিল না । যাহা বলিতেছিলেন তার খেই হারাইয় গেল। কিছুক্ষণ পরে আর থাকিতে পারিলেন ন। দামিনীর ঘরের কাছে আসিয়া বলিলেন, দামিনী, এখানে একলা কী করিতেছ? ও ঘরে আসিবে না ? দামিনী কহিল, ন, একটু দরকার আছে। গুরু উকি মারিয়া দেখিলেন, খাচার মধ্যে একটা চিল। দিন দুই হইল কেমন করিয়া টেলিগ্রাফের তারে ঘা থাইয়৷ চিলটা মাটিতে পড়িয়া গিয়াছিল, সেখানে কাকের দলের হাত হইতে দামিনী তাহাকে উদ্ধার করিয়া আনে, তার পর হইতে শুশ্ৰুষা চলিতেছে । এই তো গেল চিল— আবার দামিনী একটা কুকুরের বাচ্ছ জোটাইয়াছে, তার রূপও যেমন কৌলীন্তও তেমনি। সে একটা মূর্তিমান রসভঙ্গ। করতালের একটু আওয়াজ পাইবামাত্র সে আকাশের দিকে মুখ তুলিয়া বিধাতার কাছে আর্তম্বরে