পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

– মালঞ্চ >ふ° নীরজ হাত ধরে বললে, “না, যেয়ে না, একটু বোসে ।” ফুলদানিতে একট। ফুল দেখিয়ে বললে, “জান এ ফুলের নাম ?” আদিত্য জানে কী জবাব দিলে ও খুশি হবে, তাই মিথ্যে করে বললে, “না, জানি নে ৷” 、 “আমি জানি। বলব ? পেটুনিয়া। তুমি মনে কর আমি কিছু জানি নে, মুখু আমি।” আদিত্য হেসে বললে, “সহধর্মিণী তুমি, যদি মুর্থ হও অন্তত আমার সমান মুর্থ। আমাদের জীবনে মূর্খতার কারবার আধাআধি ভাগে চলছে।” “সে কারবার আমার ভাগ্যে এইবারে শেষ হয়ে এল। ওই-যে দারোয়ানট। ওইখানে বসে তামাক কুটছে, ও থাকবে দেউড়িতে, কিছুদিন পরেই আমি থাকব না। ওই-যে গোরুর গাড়িটা পাথুরে কয়লা আজাড় করে দিয়ে খালি ফিরে যাচ্ছে ওর যাতায়াত চলবে রোজ রোজ, কিন্তু চলবে না আমার এই হৃদয়যন্ত্রটা।” আদিত্যের হাত হঠাৎ জোর করে চেপে ধরলে, বললে, “একেবারেই থাকব না, কিছুই থাকব না ? বলে আমাকে, তুমি তো অনেক বই পড়েছ, বলো-না আমাকে সত্যি করে।” “যাদের বই পড়েছি তাদের বিদ্যে যতদূর আমারও ততদুর । যমের দরজার কাছটাতে এসে থেমেছি আর এগোই নি ।” “বলো-না, তুমি কী মনে কর । একটুও থাকব না ? এতটুকুও না ?” “এখন আছি এটাই যদি সম্ভব হয়, তখন থাকব সেও সম্ভব ।” “নিশ্চয়ই সম্ভব, ওই বাগানটা সম্ভব আর আমিই হব অসম্ভব, এ হতেই পারে না, কিছুতেই না। সন্ধেবেলায় অমনি করেই অস্পষ্ট আলোয় কাকের ফিরবে বাসায়, এমনি করেই দুলবে স্থপুরিগাছের ডাল ঠিক আমারই চোখের সামনে । সেদিন তুমি মনে রেখে আমি আছি, আমি আছি, সমস্ত বাগানময় আমি আছি। মনে কোরো বাতাস যখন তোমার চুল ওড়াচ্ছে আমার আঙলের ছোয়া আছে তাতে। বলো, মনে করবে ?” আদিত্যকে বলতে হল, “হা, মনে করব ।” কিন্তু এমন সুরে বলতে পারলে না যাতে তার বিশ্বাসের প্রমাণ হয় । নীরজ অস্থির হয়ে বলে উঠল, “তোমাদের বই যারা লেখে ভারি তো পণ্ডিত তারা, কিছু জানে না। আমি নিশ্চয় জানি, আমার কথা বিশ্বাস করে। আমি থাকব, আমি এইখানেই থাকব, আমি তোমারই কাছে থাকব, একেবারে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এই তোমাকে বলে যাচ্ছি, কথা দিয়ে যাচ্ছি, তোমার বাগানের গাছপালা >ミ闘>8