পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ २९१ একটা প্রত্যুপকার আমার পাওনা রহিল, ইহাই ভুলিতে না পারিয়া আমরা দেবভক্তি সম্বন্ধে এমন দোকানদারির কথা বলিয়া থাকি। পূজাট। দেবতার হস্তগত হওয়াই যখন বিষয়, এবং সেটা ঠিকমত র্তাহার ঠিকানায় পৌছিলেই যখন আমার কিঞ্চিৎ লাভ আছে, তখন যত অল্প ব্যয়ে অল্প চেষ্টায় সেটা চালান করা যায় ধর্ম-ব্যবসায়ে ততই আমার জিৎ। দরকার কী ঈশ্বরের স্বরূপ ধারণার চেষ্টায়, দরকার কী কঠোর সত্যানুসন্ধানে ; সম্মুখে কাষ্ঠ প্রস্তর যাহা উপস্থিত থাকে তাহাকে ঈশ্বর বলিয়া পূজা নিবেদন করিয়া দিলে যাহার পূজা তিনি আপনি ব্যগ্র হইয়া আসিয়া হাত বাড়াইয়৷ লইবেন । আমাদের পুরাণে ও প্রচলিত কাব্যে যেরূপ বর্ণনা আছে, তাহাতে মনে হয় যেন দেবতারা আপনাদের পূজা গ্রহণের জন্য মৃতদেহের উপর শকুনি-গৃধিনীর ন্যায় কাড়াকড়ি ছেড়াছিড়ি করিতেছেন। অতএব আমাদের নিকট হইতে ভক্তিগ্রহণের লোলুপত যে ঈশ্বরেরই, এ কথা আমাদের শিক্ষিতসম্প্রদায়ের মনেও অলক্ষ্যে বিরাজ করিতেছে। কিন্তু কী মহন্তপূজায় এবং কী দেবপূজায়, ভক্তি ভক্তেরই লাভ। যাহাকে ভক্তি করি তিনি না জানিলেও ক্ষতি নাই। কিন্তু র্তাহাকেই আমার জানা চাই, তবেই আমার ভক্তির সার্থকতা। পূজ্য ব্যক্তির আদর্শকে আমাদের প্রকৃতির সহিত সম্পূর্ণ মিশাইয়া লইতে চাহিলে ভক্তি ছাড়া আর কোনো উপায়ই নাই। আমর যাহাকে পূজা করি তাহাকেই যদি বস্তুত চাই তবে তাহার প্রকৃতির আদর্শ তাহার সত্যস্বরূপ একান্ত ভক্তিযোগে হৃদয়ে স্থাপনা করিতে হয় । সেরূপ অবস্থায় ফাকি দিতে স্বতই প্রবৃত্তি হয় না ; তাহার সহিত বৈসাদৃশু ও দূরত্ব যতই দীনত্বের সহিত অনুভব করি, ততই ভক্তি বাড়িয়া উঠিয়া ক্ষুদ্র আপনাকে তাহার সহিত লীন করিবার চেষ্টা করে । 鹹 ইহাই ভক্তির গৌরব। ভক্তিরস সেই আধ্যাত্মিক রসায়নশক্তি যাহা ক্ষুদ্রকে বিগলিত করিয়া মহতের সহিত মিশ্রিত করিতে পারে। অতএব ঈশ্বরকে যখন ভক্তি করি তখন তদ্বারা তাহার ঐশ্বর্য বাড়ে না, আমরাই সেই রসস্বরূপের রাসায়নিক মিলন লাভ করি। আমাদের ঈশ্বরের আদর্শ যত মহৎ মিলনের আনন্দ ততই প্রগাঢ়, এবং তদ্বারা আত্মার প্রসার ততই বিপুল হইবে। ভক্তি আমরা যাহাকে করি, তাহাকে ছাড়া আর কাহাকেও পাই না। যদি গুরুকে ব্রহ্ম বলিয়া ভক্তি করি, তবে সে গুরুর আদর্শ ই আমাদের মনে অঙ্কিত