পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা & o & শিক্ষাসাধনের ভার কতক পরিমাণে বাংলার প্রতিও অর্পণ করিতে ইচ্ছা করি। এইজন্যই আমরা মনে করি, ইংরেজিশিক্ষা বাংলাভাষার মধ্যে যে-পরিমাণে অঙ্কুরিত হইয়া উঠে সেই পরিমাণেই তাহার ফলবান হইবার সম্ভাবনা। বাংলার শস্ত, বাংলার ভাষা, বাংলার সাহিত্যের প্রতি আমাদের কৃপাদৃষ্টি নাই, তাহার প্রতি আমাদের অস্তরের প্রীতি এবং একান্ত বিশ্বাস আছে, এ কথায় যাঁহাদের ‘সন্দেহ হয় তাহারা পুনর্বার ধীরভাবে আলোচ্য প্রবন্ধগুলির যথার্থ মর্ম গ্রহণ করিয়া পড়িয়া দেখিবেন। এবং যদি কোথাও দৈবক্রমে কোনো একটি বা দুটি কথায় কোনো ক্রটি বা কোনো অলংকারদোষ ঘটিয়া থাকে তবে তাহা অনুগ্রহপূর্বক মার্জনা করিবেন ; কারণ, আমরা তর্কের ইন্ধন সংগ্ৰহ করিবার জন্ত প্রবন্ধগুলি লিখি নাই, যথার্থই আবশ্বক এবং বেদনা অনুভব করিয়া লিথিয়াছি। У\o o e প্রসঙ্গকথা > অল্পকাল হইল বাংলাদেশের তৎসাময়িক শাসনকর্তা ম্যাকেঞ্জিসাহেবকে সভাপতির আসনে বসাইয়া মান্তবর শ্ৰীযুক্ত ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার মহাশয় তাহার স্বপ্রতিষ্ঠিত সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশনের দুরবস্থা উপলক্ষে নিজের সম্বন্ধে করুণা, স্বদেশ সম্বন্ধে আক্ষেপ, এবং স্বদেশীয়ের প্রতি আক্রোশ প্রকাশ করিয়াছেন। ব্যাপারটি সম্পূর্ণ শোচনীয় হইয়া উঠিয়াছিল। তাহার সমস্ত বক্তৃতার মধ্যে একটা নালিশের স্বর ছিল । বাদী ছিলেন তিনি, । প্রতিবাদী ছিল তাহার অবশিষ্ট স্বজাতিবর্গ এবং জজ ও জুরি ছিল ম্যাকেঞ্চিপ্রমুখ রাজপুরুষগণ। এ বিচারে আমাদের নিরপরাধে খালাস পাইবার আশামাত্র ছিল না। কবুল করিতেই হইবে, আমাদের অপরাধ অনেক আছে এবং সেজন্য আমরা লজ্জিত— অথবা সুগভীর অজ্ঞতা ও ঔদাসীন্ত -বশত লজ্জাবোধও আমাদের নাই । কিন্তু সেই অপরাধখগুনের ভার আমাদের দেশের বড়োলোকদের উপর । মানবসমাজের বিচারালয়ে বাঙালির নাম আসামীশ্রেণী হইতে খারিজ করিয়া লইবার জন্যই তাহারা জন্মিয়াছেন, সেই তাহাদের জীবনের সার্থকতা। নালিশ করিবার লোক ঢের আছে এবং বাঙালির নামে নালিশ শুনিবার লোকও রাজপুরুষদের মধ্যে যথেষ্ট মিলিবে । প্রাণীদের মধ্যে মনুষ্যজাতিটা খুব শ্রেষ্ঠজাতি বলিয়া প্রসিদ্ধ ; তথাপি ইতিহাসের