পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Obr8 . . রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু বাংলায় ত প্রত্যয়ের ব্যবহার নাই, সেইজন্য আমরা রঙিত বলি না। সজ্জিত হয়, সাজিত হয় না ; অতএব ত প্রত্যয় বাংলাপ্রত্যয় নহে । হিন্দি পারসি প্রভৃতি হইতে বাংলায় যে-সকল প্রত্যয়ের আমদানি হইয়াছে, সে সম্বন্ধেও আমার ওই একই বক্তব্য। সই প্রত্যয় সম্ভবত হিন্দি বা পারসি ; কিন্তু বাংলা শব্দের সহিত তাহা মিশ্রিত হইয়া ট্যাকসই প্রমাণসই মানানসই প্রভৃতি শব্দ স্বজন করিয়াছে। ওয়ান প্রত্যয় সেরূপ নহে। গাড়োয়ান দারোয়ান পালোয়ান শব্দ আমরা হিন্দি হইতে বাংলায় পাইয়াছি, প্রত্যয়টি পাই নাই । অর্থাৎ যে-সকল প্রত্যয় সংস্কৃত অথবা বিদেশীয় শব্দসহযোগে বাংলায় আসিয়াছে, বাংলার সহিত কোনো প্রকার আদানপ্রদান করিতেছে না, তাহাকে আমরা বাংলাব্যাকরণে প্রত্যয়রূপে স্বীকার করিতে পারি না । যে-সকল কৃৎতদ্ধিতের সাহায্যে বাংলা বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের স্বষ্টি হয়, বর্তমান প্রবন্ধে কেবল তাহারই উল্লেখ থাকিবে । ক্রিয়াপদ সম্বন্ধে বারাস্তরে আলোচনার ইচ্ছা রহিল। O এই প্রবন্ধে বিশেষ্য বিশেষণকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়াছি, ক্রিয়াবাচক ও পদার্থবাচক। ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য যথা, চলা বলা সাংরানো বাচানো ইত্যাদি । পদার্থবাচক যথা, হাতি ঘোড়া জিনিসপত্র ঢেকি কুলা ইত্যাদি। গুণবাচক প্রভৃতি বিশেষ্য বিশেষণের প্রয়োজন হয় নাই । অ প্রত্যয় এই প্রত্যয়যোগে একশ্রেণীর বিশেষণ শব্দের স্বষ্টি হয় ; যথা, কট্‌মটু শব্দের উত্তর অ প্রত্যয় হইয়। কটমট ( কটমট ভাষা, কটমট দৃষ্টি ), টলমল হইতে টলমল । আসন্নপ্রবণতা বুঝাইবার জন্য শব্দদ্বৈত যোগে যে-বিশেষণ হয় তাহাতে এই অ প্রত্যয়ের হাত আছে ; যথা, পড়, ধাতু হইতে পড়-পড়, পাক্ ধাতু হইতে পাক-পাক, মর ধাতু হইতে মর-মর, কঁাদ ধাতু হইতে কঁাদ-কাদ। অন্য অর্থে হয় না ; যথা, কাটাকাটা (কথা), পাকাপাকা ছাড়াছাড়া ইত্যাদি । এই প্রসঙ্গে একটি বিষয়ে পাঠকদের মনোযোগ অাকর্ষণ করিতে চাই। মনে পড়িতেছে, রামমোহন রায় তাহার বাংলাব্যাকরণে লিথিয়াছেন, বাংলায় বিশেষণপদ ১ দ্রষ্টব্য এই যে, ধ্বস্তাত্মক শব্দদ্বৈতে সর্বত্র এ নিয়ম খাটে না : যথা, আমরা টকটক লাল বা খটখট রৌদ্র বা টনটন ব্যথা বলি না, সে স্থলে টকটকে টনটনে বলিয়া থাকি। কট্‌মট্‌ টলমল জলজল, শব্দ হইতে বিকল্পে— কটমট কটমটে, টলমল টলমলে, জ্বলজ্বল জ্বলজ্বলে হইয় থাকে।