পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(RWუ® রবীন্দ্র-রচনাবলী চালাইতে হয়, তবে এ কথাই বা কেন না বলা যায় যে, বাংলায় দ্বিবচন আছে। যদি ধোপাকে কাপড় দিলাম’ কর্ম এবং গরিবকে কাপড় দিলাম’ সম্প্রদান হয়, তবে একবচনে বালক', দ্বিবচনে বালকেরা ও বহুবচনেও বালকেরা না হইবে কেন। তবে বাংলাক্রিয়াপদেই বা একবচন, দ্বিবচন, বহুবচন, ছাড়া যায় কী জন্য। তবে ছেলেদের মুখস্থ করাইতে হয়— একবচন হইল, দ্বিবচন হইল, বহুবচন হইল ; একবচন দিয়াছে’, দ্বিবচন দিয়াছে’, বহুবচন দিয়াছে’ ইত্যাদি । ‘তাহাকে দিলাম’ যদি সম্প্রদান-কারকের কোঠায় পড়ে, তবে তাহাকে মারিলাম’ সস্তাড়ন-কারক ; ছেলেকে কোলে লইলাম’ সংলালন-কারক ; সন্দেশ খাইলাম’ সম্ভোজন-কারক ; মাথা নাড়িলাম সঞ্চালন-কারক এবং এক বাংলা কর্ম-কারকের গর্ভ হইতে এমন সহস্র সঙের স্বষ্টি হইতে পারে। সংস্কৃত ও বাংলায় কেবল যে কারক-বিভক্তির সংখ্যায় মিল নাই, তাহা নহে । তাহার চেয়ে গুরুতর অনৈক্য আছে। সংস্কৃতভাষায় কর্তৃবাচ্যে ক্রিয়াপদের জটিলতা বিস্তর ; এইজন্য আধুনিক গৌড়ীয় ভাষাগুলি সংস্কৃত কর্মবাচ্য অবলম্বন করিয়াই প্রধানত উদ্ভূত। ‘করিল’ ক্রিয়াপদ ‘কৃত হইতে, কিরিব করিবে: ‘কর্তব্য’ হইতে উৎপন্ন হইয়াছে। এ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা এ প্রবন্ধে হওয়া সম্ভবপর নহে ; হন লে-সাহেব তাহার তুলনামূলক গৌড়ীয় ব্যাকরণে ইহার প্রভূত প্রমাণ দিয়াছেন। এই কর্মবাচ্যের ক্রিয়া বাংলায় কর্তৃবাচ্যে ব্যবহার হইতে থাকায় সংস্কৃতব্যাকরণ আর তাহাকে বাগ মানাইতে পারে না । সংস্কৃত তৃতীয়া বিভক্তি 'এন' বাংলায় ‘এ’ হইয়াছে ; যেমন, বাশে মাথা ফাটিয়াছে, চোখে দেখিতে পাই না ইত্যাদি । বাঘে খাইল, কথাটার ঠিক সংস্কৃত তর্জমা ব্যান্ত্রেণ খাদিতঃ । কিন্তু খাদিত শব্দ বাংলায় খাইল আকার ধারণ করিয়া কর্তৃবাচ্যের কাজ করিতে লাগিল ; সুতরাং বাঘ যাহাকে খাইল, সে বেচারা আর কর্তৃকারকের রূপ ধরিতে পারে না । এইজন্য, ব্যান্ত্রেণ রামঃ খাদিতঃ, বাংলায় হইল বাঘে রামকে খাইল ; বাঘে শব্দে করণকারকের এ-কার বিভক্তি থাকা সত্ত্বেও রাম শব্দে কর্মকারকের কে বিভক্তি লাগিল। এ খিচুড়ি সংস্কৃতব্যাকরণের কোনো পর্যায়েই পড়ে না। পণ্ডিতমশায় বলিতে পারেন, হর্ন লে সাহেব-টাহেব আমি মানি না, বাংলায় একার বিভক্তি কর্তৃকারকের বিভক্তি। আচ্ছা দেখা যাক, তেমন করিয়া মেলানো যায় কি না। ধনে শু্যামকে বশ করা গেছে, ইহার সংস্কৃতঅম্বুবাদ ধনেন শু্যামো বশীকৃতঃ । কিন্তু বাংলাবাক্যটির কর্তী কে । ‘ধনে? যদি কর্তী হইত, তবে ‘করা গেছে’ ক্রিয়া ‘করিয়াছে’ রূপ ধরিত। তাহাকে’ শব্দ কর্তা নহে, ‘কে’ বিভক্তিই