পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী হাসিয়া সংসার টেনে নিয়ে গেল মোরে, তুই শুধু পরাভূত চোখে জল ভরে দুয়ারে রহিলি বসে ছবির মতন, আমি দেখে চলে এমু মুছিয়া নয়ন । চলিতে চলিতে পথে হেরি দুই ধারে শরতের শস্তক্ষেত্রে নত শস্যভারে রৌদ্র পোহাইছে । তরুশ্রেণী উদাসীন রাজপথপাশে, চেয়ে অাছে সারাদিন আপন ছায়ার পানে বহে খরবেগ শরতের ভরা গঙ্গা । শুভ্ৰখণ্ডমেঘ মাতৃদুগ্ধ-পরিতৃপ্ত স্থখনিদ্রারত সদ্যোজাত স্বকুমার গোবৎসের মতো নীলাম্বরে শুয়ে । দীপ্ত রৌদ্রে অনাবৃত যুগযুগান্তরক্লাস্ত দিগন্তবিস্তৃত ধরণীর পানে চেয়ে ফেলিক্ষু নিশ্বাস । কী গভীর দুঃখে মগ্ন সমস্ত আকাশ, সমস্ত পৃথিবী । চলিতেছি যতদূর শুনিতেছি একমাত্র মর্মাস্তিক স্বর *যেতে আমি দিব না তোমায়” । ধরণীর প্রাস্ত হতে নীলাভ্রের সর্বপ্রান্তর্তীর ধ্বনিতেছে চিরকাল অনাস্থ্যস্ত রবে, “যেতে নাহি দিব । যেতে নাহি দিব” । সবে কহে, "যেতে নাহি দিব” । তৃণ ক্ষুদ্র অতি তারেও বাধিয়া বক্ষে মাতা বসুমতী কহিছেন প্রাণপণে, “যেতে নাহি দিব” । আয়ুক্ষীণ দীপমুখে শিখা নিব-নিব, আঁধারের গ্রাস হতে কে টানিছে তারে কহিতেছে শতবার, "যেতে দিব না রে” ।