পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२७ রবীন্দ্র-রচনাবলী হে বসুধা, নিত্য নিত্য বুঝায়ে দিতেছ মোরে— যে তৃষ্ণ, যে ক্ষুধা তোমার সংসাররথে সহস্ত্রের সাথে বাধি মোরে টানায়েছে রাত্রিদিন স্থূল সূক্ষ্ম নানাবিধ ডোরে নানা দিকে নানা পথে, আজ তার অর্থ গেল কমে ছুটির গোধূলিবেলা তন্দ্ৰালু আলোকে। তাই ক্রমে ফিরায়ে নিতেছ শক্তি, হে কৃপণা, চক্ষুকৰ্ণ থেকে আড়াল করিছ স্বচ্ছ আলো ; দিনে দিনে টানিছে কে নিম্প্রভ নেপথ্যপানে। আমাতে তোমার প্রয়োজন শিথিল হয়েছে, তাই মূল্য মোর করিছ হরণ, দিতেছ ললাটপটে বর্জনের ছাপ। কিন্তু জানি, তোমার অবজ্ঞা মোরে পারে না ফেলিতে দূরে টানি । তব প্রয়োজন হতে অতিরিক্ত যে মানুষ তারে দিতে হবে চরম সম্মান তব শেষ নমস্কারে । যদি মোরে পঙ্গু কর, যদি মোরে কর অন্ধপ্রায়, যদি বা প্রচ্ছন্ন কর নিঃশক্তির প্রদোষচ্ছায়ায়, বাধ বার্ধক্যের জালে, তবু ভাঙা মন্দিরবেদীতে প্রতিমা অক্ষুণ্ণ রবে সগৌরবে ; তারে কেড়ে নিতে শক্তি নাই তব । ভাঙো ভাঙো, উচ্চ করে ভগ্নস্তৃপ, জীর্ণতার অন্তরালে জানি মোর আনন্দস্বরূপ রয়েছে উজ্জল হয়ে । সুধা তারে দিয়েছিল আনি প্রতিদিন চতুর্দিকে রসপূর্ণ আকাশের বাণী ; প্রত্যুত্তরে নানা ছন্দে গেয়েছে সে ‘ভালোবাসিয়াছি । সেই ভালোবাসা মোরে তুলেছে স্বর্গের কাছাকাছি ছাড়ায়ে তোমার অধিকার। আমার সে ভালোবাসা সব ক্ষয়ক্ষতিশেষে অবশিষ্ট রবে ; তার ভাষা হয়তো হারাবে দীপ্তি অভ্যাসের মানম্পর্শ লেগে, তবু সে অমৃতরূপ সঙ্গে রবে যদি উঠি জেগে